ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শাহরাস্তি ক্রিকেট একাডেমীর আয়োজনে ট্যালেন্ট হান্টের পর্দা উঠলো আজ সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন মৌসুমি সরকার শাহরাস্তিতে দেবরের কোদালের কোপে ভাবির মৃত্যু প্রিয় নেতাকে বিজয়ী করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে শরিফ খান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মৌসুমিকে বিজয়ী করতে চায় জনগণ আবদুল জলিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হবেন বলে জানালেন সাধারণ জনতা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মৌসুমী সরকার শাহরাস্তি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওমর ফারুক রুমির সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় শাহরাস্তিতে সাংবাদিকদের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ ইরানের মতবিনিময় শাহরাস্তিতে সাংবাদিকদের সাথে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুন নাহার স্বপ্নার মতবিনিময়

প্রিয় বন্ধুদেরকে নিয়ে স্মৃতিচারন~ মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী

প্রত্যেক মানুষের অনেক কাছের বন্ধু থাকে তার মধ্যে একজন বন্ধু থাকে সবচেয়ে কাছের। আমারও অনেক কাছের বন্ধু বর্তমানে যোগাযোগ ও আছে। তারপর ও আমার সবচেয়ে কাছের এবং পারিবারিক বন্ধু হলো মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ(আসলাম), চার্টাড একাউন্টেন্ড।একটা মাল্টিন্যশনাল কোম্পানির এম.ডি.। তার বাড়ী ছিলো মুন্সিগঞ্জ জেলায় কিন্তু তারা স্থায়ী ভাব ভাই বোন সব এক সাথে থাকতো নিউস্কাটনে তখনকার দিনের অভিজাত এলাকা। আমি যখন ১৯৬৯সালে ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিলাম তখন থেকে তার সাথে বন্ধুত্য গড়ে উঠে, আজ পর্যন্ত বন্ধুত্ব অটল আছে।

পরবর্তীতে নটরডেম কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। স্কুল জীবন থেকে তার বাসায় আসা যাওয়া ছিলো। দোতলা বাসার নিচ তলা ঢুকতেই ডাইনিং টেবিল ছিলো, বড় ভাবী বলতো খেতে বসো, কোন দিন তার ছোট বোন নাছিমা, কোনো দিন তার সেজো বোন খাওয়া পরিবেশন করতো। বড় ভাবী আমাকে খুব আদর করতেন। অনেকক্ষন গল্প করতেন। তাদের বাসার সবাই আমাকে খুব স্নেহ এবং আদর করতেন। যা আমি কোনো দিন ভুলবো না। ইতি মধ্যে বড় ভাবী,বড় ভাই,মেজো ভাবী,সেজো ভাই, তার মা,বাবা গত হয়েছেন। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সে ছিলো এস.এম হলের এবং আমি ছিলাম মহসিন হলের ছাত্র। বন্ধুত্বের এবং পড়াশুনার প্রয়োজনে অনেক দিন তাদের ১২৬ নাম্বার রুমে তার সীটে থাকতাম। ঐ রুমে গিয়ে আরও তিন বন্ধুকে পেলাম রামগঞ্জের মজিদ, আজাদ, দাউদকান্দির মিজান,
নাজিমের সীট ছিল জানালার পাশে এস.এম হলের জানালায় সিট ছিলনা। আমি প্রতি রাত্রে দীপুর রুমে অন্যান্য বন্ধু সহ তাস খেলতাম। দীপু ছিলো এস.এম হলের ভিপি । রাত্রে জানালা খুলে যেয়ে দেখতাম নাজিম আমার উপর রাগ করে পুরো সীট জুড়ে শুয়ে থাকতো। একেতো একজনের সীট তার উপর দুই জন। আমি আস্তে,আস্তে সীটে জায়গা করার চেষ্টা করতাম ও আমাকে দিতো গুতো। তারপর জায়গা করে ঘুমাতাম। ও ছিলো অসম্ভব ভদ্র মানুষ, নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করতো, নিয়মিত ছোট বেলা থেকে নামাজ পড়তো। প্রতি সপ্তাহে বাসায় গিয়ে জামাকাপড় ইস্ত্রি করে আনতো। আমার তেমন জামাকাপড় ছিলো না। আমি প্রতি দিন ওখান থেকে ভালো ভালো জামা গায়ে দিয়ে ক্লাসে যেতাম কখনো কিছু বলতো না।

আমাকে বাসা থেকে তৎকালীন সময়ে ৪০০-৫০০ টাকা দেওয়া হতো। এতে ভালো ভাবে চলার কথা। কিন্তু ডাইনিং এ খাবারের দাম ছিলো প্রতি বেলা ১.৫০ টাকা মাত্র। প্রথম দিন খেতে বসে প্লেট দুইয়ে পাশের একটা গামলায় ময়লা পানির মতো মনে হলো, আমি সেখানে প্লেট দোয়া পানি ঢেলে দিই, সাথে সাথে আর এক বড় ভাই, রাগৈ গ্রামের ইউনুস ভাই বল্লো তুই কি করলি ওটাতো ডালের গামলা! সে কি জঘন্য খাবার। নেহায়েত বিপদে পড়লে হলে খেতাম। না হয় সব সময় নিউমার্কেটে ভাই ভাই হোটেলে খেতাম। যার কারনে আমার টাকার শর্ট পড়তো নাজিমের মানিব্যাগ থেকে ওর সামনে প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে নিতাম শুধু বলতো, দূরশালা।

এস. এম হলের কেন্টিনে এক দিন নাস্তা করছিলাম হঠাৎ দেখি এক ছাত্র ডিম ভাজা ঠিক মত না হওয়ার কারনে কেন্টিন বয়কে থাপ্পড় মারলো। কেন্টিন বয় বল্লো স্যার আমার হাতের উপর দিয়ে কতো স্যার প্রফেসর হয়ে গেলো। আজকে আপনি আমাকে মারলেন। ক্যান্টিন বয়ের নাম মনে নাই ( তুমি যেখানে থাকো ভালো থেকো)।

বিকালে সব বন্ধুরা চলে যেতাম হাকিম চত্বরে, টি.এস.সি তে চা খেতাম আর রোকেয়া, শামছুন নাহার হলের মেয়েদেরকে দেখতাম। সেখানে বুয়েট থেকে যোগ দিতো আমার দুই ভাগিনা কবির এবং ফারুকসহ আরও অনেক বন্ধু।

আমি, আর্মির এক ব্রিগেডিয়ারের ছেলে সহ আরও তিন জনকে বি. কম এর একাউন্টিং পড়াতাম। তারা লং টেনিস খেলতো আমিও তাদের সাথে খেলতাম।।এক মাত্র এস.এম হলে লং টেনিস কোট ছিলো। তত দিনে আমি মহসীন হলে ইউনুস ভাই এর রুমে চলে এসেছি।

আমাদের অনেক বছর সেশন জট ছিলো। প্রতিদিন সকাল বেলায় আমার ছাত্ররা আমাকে নিয়ে লং টেনিস খেলতো। এক দিন নাজিম সিংগেল রুমে উঠেছে। রুম সেলিব্রেট করার জন্য আমাকে রাত্রে এস.এম হলে যেতে বললো। পরের দিন আমার একটা পরিক্ষা ছিলো। বই খাতা নিয়ে রাত্রে চলে গেলাম এস. এম হলে। দুই বন্ধু মিলে ঘুমাতে যাবো এমন সময় শুনি পুরো হল আর্মিরা ঘেরাও করেছে। কি ব্যাপার, জানতে পারলাম? হলে কুমিল্লার ছেলেদের সাথে বরিশালের ছেলেদের মধ্যে মারা মারি হয়েছে। তখন এরশাদ সরকারের জরুরী অবস্থা ছিলো। কোন অপরাধ করলে ৭ বছর কারাদন্ডের নিয়ম করা হয়ে ছিলো।

আর্মিরা রুমে রুমে গিয়ে বললো, যারা এ হলের ছাত্র না তারা হলের মধ্যে খানের মাঠে চলে যাও। নাজিম বললো বাথরুমে গিয়ে বসে থাক। আমি বন্ধু দিপুকে(হলের ভিপি) বললাম, কি করবো? দিপু বললো, আমার রুমে বসে থাক। কিছুক্ষন পরে দিপুর রুমে আর্মি ঢুকে দিপুকে বললো, বাড়ি কোথায়? দিপু বললো, সিলেটে আমি এ হলের ভিপি। আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি এ হলের ছাত্র? আমি বললাম না মহসিন হলের। তখন আমাকে মাঠে চলে যেতে বললো। তখন দিপু আমাকে বললো যা কিছু হবে না। ঐ সময় মান্না-আক্তার ভাই ডাকসুর ভিপি ও জিএস ছিলেন। মাঠে গেলাম ২৪০ জনকে গাড়িতে উঠিয়ে সরওয়ার্দী উদ্যানে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে লাইন করে বসানো হলো কিছুক্ষন পর পর গননা করা হতো।

ওখানে মসজিদ ছিলো বেশীরভাগ ছেলেরা ফজরের নামাজের সময় মসজিদে গিয়ে বসে ছিলো। আমার ছাত্ররা যথারীতি লং টেমিস কোটে এসে জানতে পারে আমি এরেষ্ট হয়ে আর্মি ক্যাম্পে আছি। ওরা,বুয়েট থেকে আমার ভাগিনা কবির ও ফারুক, হলের বব্ধুরা সহ বিভিন্ন হল থেকে হাজার হাজার ছাত্র ভোর বেলা এসে জড়ো হয়ে মিছিল করা শুরু করে দিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (সম্ভবত মতিন স্যার) এবং ডাকসুর নেতৃবৃন্দ এসে আর্মির প্রধানের সাথে বসলেন। তখন ঠিক হলো বরিশালের ছাত্রদেরকে দুই বাড়ি, কুমিল্লার ছেলেদেরকে এক বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। যাক ৭ বছর জেল থেকে বাচঁলাম।

প্রথমে গেলেন এক ম্যাজিস্ট্রেট, বরিশাল বাড়ি উনি বলেন, আমি ভাইকে টাকা দিতে এসে রাত্রে দেরী হওয়াতে থেকে গেছি। আমরা ভাবছিলাম ওনাকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু পরে দেখলাম ওনার বুকে তিনটা জোরে জোরে লাথি মারলো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। আমি হলে মারা যেতাম। যাক আমার পালা আসলো আমাকে বললো বাড়ি কোথায়? আমি ভয়ে বললাম রামগঞ্জ, আমাকে এক বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিলো।

সবাইকে এক বাড়ি, দুই বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিলো। আমার জীবনে কোনো দিন আমার বাবা- মা আমাকে কখনও মারে নাই। পরবর্তিতে আমার একান্ত কাছের এবং এখন পর্যন্ত পারিবারিক বন্ধু নাছিম সে নাটক,আবৃতি অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিলো।

বর্তমানে সরকারি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সুপ্রীমকোর্টের এডভোকেট, টিভিতে আবৃতি ও টকশো করে। আমি দাবা,তাস, ইন্ডোর গেমের সাথে জড়িত ছিলাম বলে মহসিন হলের সবাই আমাদেরকে কম বেশী ছিনতো।আমি মুহসিন হলের চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। নীরু ও বাবলু তখন হলের ত্রাস।নিরু এবং বাবলু দুই ভাই। তাদের মধ্যে একজন ( নাম মনে পড়ছে না) প্রায় আমার সাথে দাবা খেলতো। আমাদের রুম ছিলো বাসদের আড্ডা খানা । এক দিন আমি আর নাছিম রুমে এসে দেখি আমাদের রুমের তালা ভেঙ্গে তোষক,লেপ,বালিশ সব মুহসিন হলের কেন্টিনের ছাদে ফেলে দিয়েছে। তখন আমরা হল প্রভোষ্ট ড. আবুহেনা মোস্তফা কামাল স্যারের নিকট গিয়ে বলি। তখন স্যার আমাদের সাথে হলে গিয়ে সব ঠিক করে দেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

নিরু/ বাবলু পরে দাবা খেলতে এলে বললাম, সব পেলে দিলেন কেনো? মিছিলের সময় মাথা ঠিক থাকেনা। এটা কোনো ব্যাপার না। এক জজের ছেলে ,বন্ধু কামাল আহমেদ( বর্তমানে BBC. এর সংবাদ পাঠক এবং সংবাদ দাতা লন্ডনে থাকে) সে মাঝে মাঝে আমাদের রুমে থাকতো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে সকাল বেলা প্রথমে মধুর ক্যান্টিনে গেলাম। তখন কামাল আহমেদ এর সাথে দেখা হলো। সে বললো, দোস্ত টাকা থাকলে ৫টা টাকা দে। তাকে টাকা দিলাম এবং নাস্তা খাওয়ার পর বললো, চল মিছিলে যাই।

মিছিলে কার্জন হলে যাওয়ার পর গোলাগুলি শুরু হয়। আমি কলাভবন চলে আসি। এসে দেখি ৩/৪ টা লাশ কলাভবনে নেতৃবৃন্দরা নিয়ে আসে। নেতৃবৃন্দের মধ্যে বুয়েটের আমার ভাগিনা ফারুক আহমেদ ও ছিলো।(শসে তখন বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা)। পুলিশরা যখন কলা ভবনে হানা দিলো তখন বুদ্ধি করে মুহসিন হলের রুমে না গিয়ে মুহসিন হলের পিছনের ওয়ালের নিচের মাটি সরিয়ে ওয়ালের নিচ দিয়ে কোনো রকমে বের হয়ে চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এ ডুকলাম। তারা কিছু খেতে দিলো, খেয়ে কোনো রকমে নাজিমের ইস্কাটনের বাসায় চলে গেলাম।

ঐ দিকে কলা ভবনে পুলিশ ধাওয়া করলে লাশ গুলি নিয়ে আসা হয় মুহসিন হলে।পুলিশ মুহসিন হল ঘেরাও করলে ফারুক আমাকে খু্ঁজতে এবং আশ্রয় নিতে আমার রুমে যায় ।রুমে গিয়ে দেখে তালা মারা তার পর সে এরেষ্ট হয় এবং নির্যাতনের শিকার হয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষের দিকে অথবা বেকার জীবনে মাসের শেষে আমার ছোট বোন বিনাকে( সহকারী অধ্যাপক, চাঁদপুর পুরান বাজার কলেজ) দেখতে বদরুন্নেছা কলেজের হোস্টেলে যেতাম। তখন সে ধরে নিতো দাদার টাকা শেষ হয়ে গেছে। সে রুম থেকে আসার সময় যা পারতো নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। শুরু হলো আমার বেকার জীবন। তখন বেশীর ভাগ সময়ে মুহসীন হল থেকে ভাগিনাদের বুয়েটের শহীদ স্মৃতি হলের ২০২২ নাম্বার রুমে থাকতাম। এরশাদ সরকার তখন সকল সরকারী চাকুরীর নিয়োগ বন্ধ করে দিলেন। তখন আমাদের বন্ধুদের মধ্যে প্রথম চাকুরী পেল আজাদ- ন্যাশনাল ব্যাংকে, নাজিম- গ্রামীন ব্যাংকে।

আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী না করে ন্যাশনাল ব্যাংকে যোগ দেয়। ৫০০০/ টাকা বেতনে। তখন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাদের স্কেল ছিলো ৭৫০/ টাকা।প্রায় সময় তার অফিসে গিয়ে। হাজির বিরিয়ানি খেয়ে আসতাম। আসার সময় কিছু টাকা দিয়ে দিতো তার বড় ভাই কল্যানপুরে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে। ঐ বাসায় সব বেকার বন্ধুরা থাকতাম। আড্ডা দিতাম। আজাদ কোনো রকম খিচুড়ি রান্না করতে পারতো তা খাওয়া হতো। টাকার প্রয়োজন হলে নাজিমের কাছে যেতাম। তখন আমি বাড়ি থেকে কোনো টাকা নিতাম না। আমার বেকার জীবনে আজাদ এবং নাজিমের কাছ থেকে সব সময় টাকা নিয়েছি। তাদের কাছে আমি চিরঋনি। জীবনে কোনো দিন তাদের দান কি ভাবে শোধ করবো জানিনা আজাদ আজ পঙ্গু হয়ে ঘরে বসা। আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করি থাকে তুমি ভালো রাখো।

পরবর্তীতে আমি ম্যাগনেট গ্রুপের একটা গার্মেন্টস কোম্পানীর মেশিনারীজ আমদানি এবং প্রতিস্থাপন কোম্পানিতে ২০০০/ টাকা বেতনে চাকরি নিই। তখন গিয়ে উঠলাম আমার প্রিয় চাচা মরহুম নজিবুর রহমান পাটোয়ারীর মেছে। ৬ মাস পর বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড কুমিল্লা চাকরি নিয়ে চলে গেলাম। চাকুরী ছেড়ে যাওয়ার সময় ঐ কোম্পানীর ডিরেক্টররা বললেন, আপনাকে আমাদের পার্টনার করে নিবো।আমি ভরসা পেলাম না। সরকারী চাকুরীতে যোগ দিলাম। বন্ধু নাছিম বললো, মফস্বলে যাইস না। যাক পরবর্তিতে নাজিম, নাসিম, মজিদ, আজাদ এদের সাথে পারিবারিক যোগাযোগ, আসা যাওয়া এখন পর্যন্ত আছে।

আমার বিয়ের সময় গ্রামে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে রাত্র ১০টার সময় হঠাৎ দেখি আমার কাছের বন্ধু নাজিম আমার বাড়িতে এসেছে। আমরা দেখে অবাক। কারন দোয়া ভাঙ্গা,শাহরাস্তি থেকে ৫মাইল হেটে অথবা নৌকা দিয়ে আমাদের কেশরাংগা যেতে হতো। অজপাড়া গাঁও রাস্তা খুবই খারাপ ছিলো,বর্ষাকালে। মাঝে মাঝে রাস্তা ছিলো না। পানি দিয়ে আবার রাস্তা উঠতে হতো। সে শুধু জানতো কেশরাঙ্গা গ্রাম। সে বহু কষ্টে গন্ধবপুর, খেয়াঘাটে এসে অন্ধকারের মধ্যে আমার নজিব চাচাকে পেয়ে যায়।

শহরের ছেলে গ্রামের কোন অভিজ্ঞতা তার ছিলোনা। প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে মহা খুশি।আমার বিয়ে হয়েছিলো আমার প্রিয় ফারুক মামার বাসা” বায়তুল আমান” রেইস কোর্স,কুমিল্লায়। অন্যান্য বন্ধুরা কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। আমার বর যাত্রী শাহরাস্তি থেকে কুমিল্লায় অফিসের গাড়ীতে আনা হয়েছে। অনেক বর যাত্রী হয়েছিল। হোটেল থেকেও খাওয়া আনতে হয়েছে। নাহার খালাম্মা অনেক পরিশ্রম করেছিলেন।তিনি কয়েক বছর আগে গত হয়েছেন।ওনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

ঐ বিয়েতে আামাদের সমস্ত আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, অফিসের সহকর্মীরা এবং নরসিংদী থেকে আমার প্রিয় মামী ( সুরুজ মামার বৌ) নবুখালাম্মা ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের বেশীর ভাগই বিয়ে আত্মীয়ের মধ্যে তাই সম্পর্ক লিখতে উল্টা পাল্টা হয়ে যাচ্ছে।আমার ছোট ভাই মেসকাত ও ফারুক মামা অনেক পরিশ্রম করে বিয়ের সব কিছু দেখাশুনা করেছে।মেসকাতের পাও কেটে গিয়েছিলো। নাজিম আমার অনেক আত্মীয় এবং পরিচিত জনকে চাকুরী দিয়েছে। যখন যা বলছি তাই তাই করেছে। বিশেষ করে তার এবং অন্যান্য বন্ধুদের ঋন কোনো দিন আমি শোধ করতে পারবো না। আমার জীবনে অনেক বন্ধু এসেছে। স্বল্প পরিসরে তাদের কথা লিখতে পারি নাই বলে সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে লেখার চেষ্টা করবো। সব বন্ধুরা ভালো থাকো। তোমাদের এবং তোমাদের পরিবারের সু- স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী 

প্রাবন্ধিক ও লেখক

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তি ক্রিকেট একাডেমীর আয়োজনে ট্যালেন্ট হান্টের পর্দা উঠলো আজ

প্রিয় বন্ধুদেরকে নিয়ে স্মৃতিচারন~ মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী

Update Time : ০৭:২০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রত্যেক মানুষের অনেক কাছের বন্ধু থাকে তার মধ্যে একজন বন্ধু থাকে সবচেয়ে কাছের। আমারও অনেক কাছের বন্ধু বর্তমানে যোগাযোগ ও আছে। তারপর ও আমার সবচেয়ে কাছের এবং পারিবারিক বন্ধু হলো মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ(আসলাম), চার্টাড একাউন্টেন্ড।একটা মাল্টিন্যশনাল কোম্পানির এম.ডি.। তার বাড়ী ছিলো মুন্সিগঞ্জ জেলায় কিন্তু তারা স্থায়ী ভাব ভাই বোন সব এক সাথে থাকতো নিউস্কাটনে তখনকার দিনের অভিজাত এলাকা। আমি যখন ১৯৬৯সালে ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ স্কুলের ছাত্র ছিলাম তখন থেকে তার সাথে বন্ধুত্য গড়ে উঠে, আজ পর্যন্ত বন্ধুত্ব অটল আছে।

পরবর্তীতে নটরডেম কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি। স্কুল জীবন থেকে তার বাসায় আসা যাওয়া ছিলো। দোতলা বাসার নিচ তলা ঢুকতেই ডাইনিং টেবিল ছিলো, বড় ভাবী বলতো খেতে বসো, কোন দিন তার ছোট বোন নাছিমা, কোনো দিন তার সেজো বোন খাওয়া পরিবেশন করতো। বড় ভাবী আমাকে খুব আদর করতেন। অনেকক্ষন গল্প করতেন। তাদের বাসার সবাই আমাকে খুব স্নেহ এবং আদর করতেন। যা আমি কোনো দিন ভুলবো না। ইতি মধ্যে বড় ভাবী,বড় ভাই,মেজো ভাবী,সেজো ভাই, তার মা,বাবা গত হয়েছেন। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সে ছিলো এস.এম হলের এবং আমি ছিলাম মহসিন হলের ছাত্র। বন্ধুত্বের এবং পড়াশুনার প্রয়োজনে অনেক দিন তাদের ১২৬ নাম্বার রুমে তার সীটে থাকতাম। ঐ রুমে গিয়ে আরও তিন বন্ধুকে পেলাম রামগঞ্জের মজিদ, আজাদ, দাউদকান্দির মিজান,
নাজিমের সীট ছিল জানালার পাশে এস.এম হলের জানালায় সিট ছিলনা। আমি প্রতি রাত্রে দীপুর রুমে অন্যান্য বন্ধু সহ তাস খেলতাম। দীপু ছিলো এস.এম হলের ভিপি । রাত্রে জানালা খুলে যেয়ে দেখতাম নাজিম আমার উপর রাগ করে পুরো সীট জুড়ে শুয়ে থাকতো। একেতো একজনের সীট তার উপর দুই জন। আমি আস্তে,আস্তে সীটে জায়গা করার চেষ্টা করতাম ও আমাকে দিতো গুতো। তারপর জায়গা করে ঘুমাতাম। ও ছিলো অসম্ভব ভদ্র মানুষ, নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করতো, নিয়মিত ছোট বেলা থেকে নামাজ পড়তো। প্রতি সপ্তাহে বাসায় গিয়ে জামাকাপড় ইস্ত্রি করে আনতো। আমার তেমন জামাকাপড় ছিলো না। আমি প্রতি দিন ওখান থেকে ভালো ভালো জামা গায়ে দিয়ে ক্লাসে যেতাম কখনো কিছু বলতো না।

আমাকে বাসা থেকে তৎকালীন সময়ে ৪০০-৫০০ টাকা দেওয়া হতো। এতে ভালো ভাবে চলার কথা। কিন্তু ডাইনিং এ খাবারের দাম ছিলো প্রতি বেলা ১.৫০ টাকা মাত্র। প্রথম দিন খেতে বসে প্লেট দুইয়ে পাশের একটা গামলায় ময়লা পানির মতো মনে হলো, আমি সেখানে প্লেট দোয়া পানি ঢেলে দিই, সাথে সাথে আর এক বড় ভাই, রাগৈ গ্রামের ইউনুস ভাই বল্লো তুই কি করলি ওটাতো ডালের গামলা! সে কি জঘন্য খাবার। নেহায়েত বিপদে পড়লে হলে খেতাম। না হয় সব সময় নিউমার্কেটে ভাই ভাই হোটেলে খেতাম। যার কারনে আমার টাকার শর্ট পড়তো নাজিমের মানিব্যাগ থেকে ওর সামনে প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে নিতাম শুধু বলতো, দূরশালা।

এস. এম হলের কেন্টিনে এক দিন নাস্তা করছিলাম হঠাৎ দেখি এক ছাত্র ডিম ভাজা ঠিক মত না হওয়ার কারনে কেন্টিন বয়কে থাপ্পড় মারলো। কেন্টিন বয় বল্লো স্যার আমার হাতের উপর দিয়ে কতো স্যার প্রফেসর হয়ে গেলো। আজকে আপনি আমাকে মারলেন। ক্যান্টিন বয়ের নাম মনে নাই ( তুমি যেখানে থাকো ভালো থেকো)।

বিকালে সব বন্ধুরা চলে যেতাম হাকিম চত্বরে, টি.এস.সি তে চা খেতাম আর রোকেয়া, শামছুন নাহার হলের মেয়েদেরকে দেখতাম। সেখানে বুয়েট থেকে যোগ দিতো আমার দুই ভাগিনা কবির এবং ফারুকসহ আরও অনেক বন্ধু।

আমি, আর্মির এক ব্রিগেডিয়ারের ছেলে সহ আরও তিন জনকে বি. কম এর একাউন্টিং পড়াতাম। তারা লং টেনিস খেলতো আমিও তাদের সাথে খেলতাম।।এক মাত্র এস.এম হলে লং টেনিস কোট ছিলো। তত দিনে আমি মহসীন হলে ইউনুস ভাই এর রুমে চলে এসেছি।

আমাদের অনেক বছর সেশন জট ছিলো। প্রতিদিন সকাল বেলায় আমার ছাত্ররা আমাকে নিয়ে লং টেনিস খেলতো। এক দিন নাজিম সিংগেল রুমে উঠেছে। রুম সেলিব্রেট করার জন্য আমাকে রাত্রে এস.এম হলে যেতে বললো। পরের দিন আমার একটা পরিক্ষা ছিলো। বই খাতা নিয়ে রাত্রে চলে গেলাম এস. এম হলে। দুই বন্ধু মিলে ঘুমাতে যাবো এমন সময় শুনি পুরো হল আর্মিরা ঘেরাও করেছে। কি ব্যাপার, জানতে পারলাম? হলে কুমিল্লার ছেলেদের সাথে বরিশালের ছেলেদের মধ্যে মারা মারি হয়েছে। তখন এরশাদ সরকারের জরুরী অবস্থা ছিলো। কোন অপরাধ করলে ৭ বছর কারাদন্ডের নিয়ম করা হয়ে ছিলো।

আর্মিরা রুমে রুমে গিয়ে বললো, যারা এ হলের ছাত্র না তারা হলের মধ্যে খানের মাঠে চলে যাও। নাজিম বললো বাথরুমে গিয়ে বসে থাক। আমি বন্ধু দিপুকে(হলের ভিপি) বললাম, কি করবো? দিপু বললো, আমার রুমে বসে থাক। কিছুক্ষন পরে দিপুর রুমে আর্মি ঢুকে দিপুকে বললো, বাড়ি কোথায়? দিপু বললো, সিলেটে আমি এ হলের ভিপি। আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি এ হলের ছাত্র? আমি বললাম না মহসিন হলের। তখন আমাকে মাঠে চলে যেতে বললো। তখন দিপু আমাকে বললো যা কিছু হবে না। ঐ সময় মান্না-আক্তার ভাই ডাকসুর ভিপি ও জিএস ছিলেন। মাঠে গেলাম ২৪০ জনকে গাড়িতে উঠিয়ে সরওয়ার্দী উদ্যানে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে লাইন করে বসানো হলো কিছুক্ষন পর পর গননা করা হতো।

ওখানে মসজিদ ছিলো বেশীরভাগ ছেলেরা ফজরের নামাজের সময় মসজিদে গিয়ে বসে ছিলো। আমার ছাত্ররা যথারীতি লং টেমিস কোটে এসে জানতে পারে আমি এরেষ্ট হয়ে আর্মি ক্যাম্পে আছি। ওরা,বুয়েট থেকে আমার ভাগিনা কবির ও ফারুক, হলের বব্ধুরা সহ বিভিন্ন হল থেকে হাজার হাজার ছাত্র ভোর বেলা এসে জড়ো হয়ে মিছিল করা শুরু করে দিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (সম্ভবত মতিন স্যার) এবং ডাকসুর নেতৃবৃন্দ এসে আর্মির প্রধানের সাথে বসলেন। তখন ঠিক হলো বরিশালের ছাত্রদেরকে দুই বাড়ি, কুমিল্লার ছেলেদেরকে এক বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। যাক ৭ বছর জেল থেকে বাচঁলাম।

প্রথমে গেলেন এক ম্যাজিস্ট্রেট, বরিশাল বাড়ি উনি বলেন, আমি ভাইকে টাকা দিতে এসে রাত্রে দেরী হওয়াতে থেকে গেছি। আমরা ভাবছিলাম ওনাকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু পরে দেখলাম ওনার বুকে তিনটা জোরে জোরে লাথি মারলো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। আমি হলে মারা যেতাম। যাক আমার পালা আসলো আমাকে বললো বাড়ি কোথায়? আমি ভয়ে বললাম রামগঞ্জ, আমাকে এক বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিলো।

সবাইকে এক বাড়ি, দুই বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিলো। আমার জীবনে কোনো দিন আমার বাবা- মা আমাকে কখনও মারে নাই। পরবর্তিতে আমার একান্ত কাছের এবং এখন পর্যন্ত পারিবারিক বন্ধু নাছিম সে নাটক,আবৃতি অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিলো।

বর্তমানে সরকারি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সুপ্রীমকোর্টের এডভোকেট, টিভিতে আবৃতি ও টকশো করে। আমি দাবা,তাস, ইন্ডোর গেমের সাথে জড়িত ছিলাম বলে মহসিন হলের সবাই আমাদেরকে কম বেশী ছিনতো।আমি মুহসিন হলের চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। নীরু ও বাবলু তখন হলের ত্রাস।নিরু এবং বাবলু দুই ভাই। তাদের মধ্যে একজন ( নাম মনে পড়ছে না) প্রায় আমার সাথে দাবা খেলতো। আমাদের রুম ছিলো বাসদের আড্ডা খানা । এক দিন আমি আর নাছিম রুমে এসে দেখি আমাদের রুমের তালা ভেঙ্গে তোষক,লেপ,বালিশ সব মুহসিন হলের কেন্টিনের ছাদে ফেলে দিয়েছে। তখন আমরা হল প্রভোষ্ট ড. আবুহেনা মোস্তফা কামাল স্যারের নিকট গিয়ে বলি। তখন স্যার আমাদের সাথে হলে গিয়ে সব ঠিক করে দেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

নিরু/ বাবলু পরে দাবা খেলতে এলে বললাম, সব পেলে দিলেন কেনো? মিছিলের সময় মাথা ঠিক থাকেনা। এটা কোনো ব্যাপার না। এক জজের ছেলে ,বন্ধু কামাল আহমেদ( বর্তমানে BBC. এর সংবাদ পাঠক এবং সংবাদ দাতা লন্ডনে থাকে) সে মাঝে মাঝে আমাদের রুমে থাকতো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে সকাল বেলা প্রথমে মধুর ক্যান্টিনে গেলাম। তখন কামাল আহমেদ এর সাথে দেখা হলো। সে বললো, দোস্ত টাকা থাকলে ৫টা টাকা দে। তাকে টাকা দিলাম এবং নাস্তা খাওয়ার পর বললো, চল মিছিলে যাই।

মিছিলে কার্জন হলে যাওয়ার পর গোলাগুলি শুরু হয়। আমি কলাভবন চলে আসি। এসে দেখি ৩/৪ টা লাশ কলাভবনে নেতৃবৃন্দরা নিয়ে আসে। নেতৃবৃন্দের মধ্যে বুয়েটের আমার ভাগিনা ফারুক আহমেদ ও ছিলো।(শসে তখন বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা)। পুলিশরা যখন কলা ভবনে হানা দিলো তখন বুদ্ধি করে মুহসিন হলের রুমে না গিয়ে মুহসিন হলের পিছনের ওয়ালের নিচের মাটি সরিয়ে ওয়ালের নিচ দিয়ে কোনো রকমে বের হয়ে চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এ ডুকলাম। তারা কিছু খেতে দিলো, খেয়ে কোনো রকমে নাজিমের ইস্কাটনের বাসায় চলে গেলাম।

ঐ দিকে কলা ভবনে পুলিশ ধাওয়া করলে লাশ গুলি নিয়ে আসা হয় মুহসিন হলে।পুলিশ মুহসিন হল ঘেরাও করলে ফারুক আমাকে খু্ঁজতে এবং আশ্রয় নিতে আমার রুমে যায় ।রুমে গিয়ে দেখে তালা মারা তার পর সে এরেষ্ট হয় এবং নির্যাতনের শিকার হয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষের দিকে অথবা বেকার জীবনে মাসের শেষে আমার ছোট বোন বিনাকে( সহকারী অধ্যাপক, চাঁদপুর পুরান বাজার কলেজ) দেখতে বদরুন্নেছা কলেজের হোস্টেলে যেতাম। তখন সে ধরে নিতো দাদার টাকা শেষ হয়ে গেছে। সে রুম থেকে আসার সময় যা পারতো নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। শুরু হলো আমার বেকার জীবন। তখন বেশীর ভাগ সময়ে মুহসীন হল থেকে ভাগিনাদের বুয়েটের শহীদ স্মৃতি হলের ২০২২ নাম্বার রুমে থাকতাম। এরশাদ সরকার তখন সকল সরকারী চাকুরীর নিয়োগ বন্ধ করে দিলেন। তখন আমাদের বন্ধুদের মধ্যে প্রথম চাকুরী পেল আজাদ- ন্যাশনাল ব্যাংকে, নাজিম- গ্রামীন ব্যাংকে।

আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী না করে ন্যাশনাল ব্যাংকে যোগ দেয়। ৫০০০/ টাকা বেতনে। তখন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাদের স্কেল ছিলো ৭৫০/ টাকা।প্রায় সময় তার অফিসে গিয়ে। হাজির বিরিয়ানি খেয়ে আসতাম। আসার সময় কিছু টাকা দিয়ে দিতো তার বড় ভাই কল্যানপুরে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে। ঐ বাসায় সব বেকার বন্ধুরা থাকতাম। আড্ডা দিতাম। আজাদ কোনো রকম খিচুড়ি রান্না করতে পারতো তা খাওয়া হতো। টাকার প্রয়োজন হলে নাজিমের কাছে যেতাম। তখন আমি বাড়ি থেকে কোনো টাকা নিতাম না। আমার বেকার জীবনে আজাদ এবং নাজিমের কাছ থেকে সব সময় টাকা নিয়েছি। তাদের কাছে আমি চিরঋনি। জীবনে কোনো দিন তাদের দান কি ভাবে শোধ করবো জানিনা আজাদ আজ পঙ্গু হয়ে ঘরে বসা। আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করি থাকে তুমি ভালো রাখো।

পরবর্তীতে আমি ম্যাগনেট গ্রুপের একটা গার্মেন্টস কোম্পানীর মেশিনারীজ আমদানি এবং প্রতিস্থাপন কোম্পানিতে ২০০০/ টাকা বেতনে চাকরি নিই। তখন গিয়ে উঠলাম আমার প্রিয় চাচা মরহুম নজিবুর রহমান পাটোয়ারীর মেছে। ৬ মাস পর বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড কুমিল্লা চাকরি নিয়ে চলে গেলাম। চাকুরী ছেড়ে যাওয়ার সময় ঐ কোম্পানীর ডিরেক্টররা বললেন, আপনাকে আমাদের পার্টনার করে নিবো।আমি ভরসা পেলাম না। সরকারী চাকুরীতে যোগ দিলাম। বন্ধু নাছিম বললো, মফস্বলে যাইস না। যাক পরবর্তিতে নাজিম, নাসিম, মজিদ, আজাদ এদের সাথে পারিবারিক যোগাযোগ, আসা যাওয়া এখন পর্যন্ত আছে।

আমার বিয়ের সময় গ্রামে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে রাত্র ১০টার সময় হঠাৎ দেখি আমার কাছের বন্ধু নাজিম আমার বাড়িতে এসেছে। আমরা দেখে অবাক। কারন দোয়া ভাঙ্গা,শাহরাস্তি থেকে ৫মাইল হেটে অথবা নৌকা দিয়ে আমাদের কেশরাংগা যেতে হতো। অজপাড়া গাঁও রাস্তা খুবই খারাপ ছিলো,বর্ষাকালে। মাঝে মাঝে রাস্তা ছিলো না। পানি দিয়ে আবার রাস্তা উঠতে হতো। সে শুধু জানতো কেশরাঙ্গা গ্রাম। সে বহু কষ্টে গন্ধবপুর, খেয়াঘাটে এসে অন্ধকারের মধ্যে আমার নজিব চাচাকে পেয়ে যায়।

শহরের ছেলে গ্রামের কোন অভিজ্ঞতা তার ছিলোনা। প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে মহা খুশি।আমার বিয়ে হয়েছিলো আমার প্রিয় ফারুক মামার বাসা” বায়তুল আমান” রেইস কোর্স,কুমিল্লায়। অন্যান্য বন্ধুরা কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। আমার বর যাত্রী শাহরাস্তি থেকে কুমিল্লায় অফিসের গাড়ীতে আনা হয়েছে। অনেক বর যাত্রী হয়েছিল। হোটেল থেকেও খাওয়া আনতে হয়েছে। নাহার খালাম্মা অনেক পরিশ্রম করেছিলেন।তিনি কয়েক বছর আগে গত হয়েছেন।ওনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

ঐ বিয়েতে আামাদের সমস্ত আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, অফিসের সহকর্মীরা এবং নরসিংদী থেকে আমার প্রিয় মামী ( সুরুজ মামার বৌ) নবুখালাম্মা ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের বেশীর ভাগই বিয়ে আত্মীয়ের মধ্যে তাই সম্পর্ক লিখতে উল্টা পাল্টা হয়ে যাচ্ছে।আমার ছোট ভাই মেসকাত ও ফারুক মামা অনেক পরিশ্রম করে বিয়ের সব কিছু দেখাশুনা করেছে।মেসকাতের পাও কেটে গিয়েছিলো। নাজিম আমার অনেক আত্মীয় এবং পরিচিত জনকে চাকুরী দিয়েছে। যখন যা বলছি তাই তাই করেছে। বিশেষ করে তার এবং অন্যান্য বন্ধুদের ঋন কোনো দিন আমি শোধ করতে পারবো না। আমার জীবনে অনেক বন্ধু এসেছে। স্বল্প পরিসরে তাদের কথা লিখতে পারি নাই বলে সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে লেখার চেষ্টা করবো। সব বন্ধুরা ভালো থাকো। তোমাদের এবং তোমাদের পরিবারের সু- স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী 

প্রাবন্ধিক ও লেখক

Facebook Comments Box