ঢাকা , বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শাহরাস্তি ক্রিকেট একাডেমীর আয়োজনে ট্যালেন্ট হান্টের পর্দা উঠলো আজ সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন মৌসুমি সরকার শাহরাস্তিতে দেবরের কোদালের কোপে ভাবির মৃত্যু প্রিয় নেতাকে বিজয়ী করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে শরিফ খান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মৌসুমিকে বিজয়ী করতে চায় জনগণ আবদুল জলিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হবেন বলে জানালেন সাধারণ জনতা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মৌসুমী সরকার শাহরাস্তি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওমর ফারুক রুমির সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় শাহরাস্তিতে সাংবাদিকদের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ ইরানের মতবিনিময় শাহরাস্তিতে সাংবাদিকদের সাথে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুন নাহার স্বপ্নার মতবিনিময়

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ~ মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী

১৯৬৯ সালে আমি ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। তখন দেশে আন্দোলন শুরু হয়। ছোট ছিলাম তেমন কিছু বুঝতাম না। তখন আমি কলাবাগান বড় বোনের বাসায় থাকতাম। স্কুলে”গ” শাখার ছাত্র ছিলাম। কলাবাগান থেকে প্রতিদিন আমি টিপু ( বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির বড় ভাই), ওবায়েদসহ মুড়ির টিনের বাসে করে স্কুলে যেতাম। ৫ পয়সা ভাড়া ছিল। এই ৫ পয়সা বেশির ভাগ সময়ে ফাঁকি দিয়ে ৩ পয়সার আইসক্রীম ও ২ পয়সার আচার কিনে খেতাম। ছাত্রদের থেকে ভাড়া তেমন নিত না। তাই সুযোগটা নিতাম।

বাসা থেকে তখন ছাত্রদেরকে অতিরিক্ত কোন পয়সা দেওয়া হতো না। তখন অত সব বুঝতাম না। আমাদের সেকশনে নাজিম,হাফিজ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে হাফিজ মারা যায়। অন্যদেরকে আল্লাহ এখনও জীবিত রেখেছে। তখন প্রায় নেতারা এসে বলতো আজ ক্লাস হবে না, সবাই গিয়ে ট্রাকে উঠো। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যাবো, ঐ ট্রাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পুত্র শেখ কামাল ভাইও থাকতেন। ওনার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাই প্রতিযোগিতা করতো।

তখন শ্লোগান দিতে হতো” চলো চলো বটতলায় চলো” তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা ” তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। “জয় বাংলা”।

ট্রাক ব্রেক করলে খুব মজা করতাম। এক জন অপর জনের গায়ে পড়তাম। বট তলায় নামিয়ে দেয়ার পর বক্তৃতা শুনতে আমাদের তেমন ভালো লাগতো না। কারন তেমন কিছু বুঝতাম না। গান শুরু হলে বটতলায় গান শুনার জন্য চলে আসতাম। আর কলাভবন দেখতাম।

হঠাৎ দেখি কলাভবনের ৪ তলায় ছেলে মেয়ে এক সাথে কথা বলে। পরের দিন ক্লাসে এসে সে কি গল্প। ক্লাস করতে হতো না সেটাই মজা ছিল।

পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষনে আমার দুলা ভাই (রেজু ভাই)এর সাথে গিয়েছিলাম। এত লোক জীবনে কখনো দেখি নাই। ওনার ভাষন শুনে মনে হলো একজন বিখ্যাত কবির একটা মনোমুগ্ধকর কবিতা আবৃতি শুনছি।তখন থেকে ওনাকে চিনলাম এবং আজ পর্যন্ত ওনার ভক্ত হয়ে আছি।

৭১এর যুদ্ধের সময় ৩ মাস ঢাকা থেকে অনেক কষ্টে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর গেলাম।আমাদের বাড়ীতে গিয়ে দেখি ঢাকার সব আত্মীয় স্বজন আমাদের বাড়িতে। তার মধ্যে পেট্রোবাংলার তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. হাবিবুর রহমান, সাইদুর রহমান,জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ইসলাম সাহেব, তিতাস গ্যাসের এম. ডি., ডাঃ বদরুন নাহার, নসু চৌধুরী সবাই পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। আরও অনেকেই থাকতেন। তার মধ্যে জহির মামা, খোকন মামা ও ডাঃ মির্জার ফ্যামিলি ছিল।

জহির মামা,খোকন মামা, ফিরোজ মামা বিভিন্ন ক্যাম্পে ক্যাম্পে কাজ করতেন।বাড়ীতে মুক্তিদের ক্যাম্প ছিলো। ওদের ঘরে এক মাত্র আমি ডুকতে পারতাম। তখন আমি গর্ব অনুভব করতাম। আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে চাইলে তারা বলতো তোমার বয়স হয় নাই।

আমি,নিরু,শরীপ, আরিফ বাঁশের বন্ধুক বানিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। রাত্রে স্কুল ঘরে সংগ্রাম কমিটির বিচার বসতো, সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে ভালো মানুষ ফারুক মামা, সাথে আমার চাচা নজিবুর রহমান পাটোয়ারী ও আরও অনেকে। লুকিয়ে লুকিয়ে বিচার দেখতাম।

অনেক হিন্দু পরিবার কে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। এক এক করে পরে সবাই ভারতে চলে যায়। শেষ বয়সে এসে স্মৃতি গুলি মনে পড়ে, তাই লিখতে ইচ্ছে করলো।

যাক অনেক ইতিহাসের পর আবার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পারিবারিক কারনে কুমিল্লা জিলা স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হই। পরে নটরডেম কলেজে এসে নাজিমকে পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নাজিম,হাফিজ, ডাক্তার টিপু , প্রকৌশলী ওবায়েদ জীবনে আরও অনেক বন্ধু এসেছে। সব বন্ধুরা ভালো থাকো। সুস্থ থাকো। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তি ক্রিকেট একাডেমীর আয়োজনে ট্যালেন্ট হান্টের পর্দা উঠলো আজ

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ~ মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী

Update Time : ০৪:৩৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

১৯৬৯ সালে আমি ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। তখন দেশে আন্দোলন শুরু হয়। ছোট ছিলাম তেমন কিছু বুঝতাম না। তখন আমি কলাবাগান বড় বোনের বাসায় থাকতাম। স্কুলে”গ” শাখার ছাত্র ছিলাম। কলাবাগান থেকে প্রতিদিন আমি টিপু ( বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির বড় ভাই), ওবায়েদসহ মুড়ির টিনের বাসে করে স্কুলে যেতাম। ৫ পয়সা ভাড়া ছিল। এই ৫ পয়সা বেশির ভাগ সময়ে ফাঁকি দিয়ে ৩ পয়সার আইসক্রীম ও ২ পয়সার আচার কিনে খেতাম। ছাত্রদের থেকে ভাড়া তেমন নিত না। তাই সুযোগটা নিতাম।

বাসা থেকে তখন ছাত্রদেরকে অতিরিক্ত কোন পয়সা দেওয়া হতো না। তখন অত সব বুঝতাম না। আমাদের সেকশনে নাজিম,হাফিজ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে হাফিজ মারা যায়। অন্যদেরকে আল্লাহ এখনও জীবিত রেখেছে। তখন প্রায় নেতারা এসে বলতো আজ ক্লাস হবে না, সবাই গিয়ে ট্রাকে উঠো। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যাবো, ঐ ট্রাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পুত্র শেখ কামাল ভাইও থাকতেন। ওনার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাই প্রতিযোগিতা করতো।

তখন শ্লোগান দিতে হতো” চলো চলো বটতলায় চলো” তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা ” তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। “জয় বাংলা”।

ট্রাক ব্রেক করলে খুব মজা করতাম। এক জন অপর জনের গায়ে পড়তাম। বট তলায় নামিয়ে দেয়ার পর বক্তৃতা শুনতে আমাদের তেমন ভালো লাগতো না। কারন তেমন কিছু বুঝতাম না। গান শুরু হলে বটতলায় গান শুনার জন্য চলে আসতাম। আর কলাভবন দেখতাম।

হঠাৎ দেখি কলাভবনের ৪ তলায় ছেলে মেয়ে এক সাথে কথা বলে। পরের দিন ক্লাসে এসে সে কি গল্প। ক্লাস করতে হতো না সেটাই মজা ছিল।

পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষনে আমার দুলা ভাই (রেজু ভাই)এর সাথে গিয়েছিলাম। এত লোক জীবনে কখনো দেখি নাই। ওনার ভাষন শুনে মনে হলো একজন বিখ্যাত কবির একটা মনোমুগ্ধকর কবিতা আবৃতি শুনছি।তখন থেকে ওনাকে চিনলাম এবং আজ পর্যন্ত ওনার ভক্ত হয়ে আছি।

৭১এর যুদ্ধের সময় ৩ মাস ঢাকা থেকে অনেক কষ্টে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর গেলাম।আমাদের বাড়ীতে গিয়ে দেখি ঢাকার সব আত্মীয় স্বজন আমাদের বাড়িতে। তার মধ্যে পেট্রোবাংলার তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. হাবিবুর রহমান, সাইদুর রহমান,জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ইসলাম সাহেব, তিতাস গ্যাসের এম. ডি., ডাঃ বদরুন নাহার, নসু চৌধুরী সবাই পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। আরও অনেকেই থাকতেন। তার মধ্যে জহির মামা, খোকন মামা ও ডাঃ মির্জার ফ্যামিলি ছিল।

জহির মামা,খোকন মামা, ফিরোজ মামা বিভিন্ন ক্যাম্পে ক্যাম্পে কাজ করতেন।বাড়ীতে মুক্তিদের ক্যাম্প ছিলো। ওদের ঘরে এক মাত্র আমি ডুকতে পারতাম। তখন আমি গর্ব অনুভব করতাম। আমি মুক্তিযুদ্ধে যেতে চাইলে তারা বলতো তোমার বয়স হয় নাই।

আমি,নিরু,শরীপ, আরিফ বাঁশের বন্ধুক বানিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। রাত্রে স্কুল ঘরে সংগ্রাম কমিটির বিচার বসতো, সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে ভালো মানুষ ফারুক মামা, সাথে আমার চাচা নজিবুর রহমান পাটোয়ারী ও আরও অনেকে। লুকিয়ে লুকিয়ে বিচার দেখতাম।

অনেক হিন্দু পরিবার কে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। এক এক করে পরে সবাই ভারতে চলে যায়। শেষ বয়সে এসে স্মৃতি গুলি মনে পড়ে, তাই লিখতে ইচ্ছে করলো।

যাক অনেক ইতিহাসের পর আবার ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পারিবারিক কারনে কুমিল্লা জিলা স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হই। পরে নটরডেম কলেজে এসে নাজিমকে পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নাজিম,হাফিজ, ডাক্তার টিপু , প্রকৌশলী ওবায়েদ জীবনে আরও অনেক বন্ধু এসেছে। সব বন্ধুরা ভালো থাকো। সুস্থ থাকো। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।

Facebook Comments Box