ঢাকা , শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

শাহরাস্তির আলোচিত আলমগীর হত্যা: ছদ্মবেশে ঢাকায় ধরা পড়লো প্রধান আসামি তপন

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার আলোচিত দিনমজুর আলমগীর হত্যাকাণ্ডে নাটকীয় মোড়—মামলার প্রধান আসামি তাজুল ইসলাম তপন অবশেষে গ্রেপ্তার। ঢাকা শহরের উত্তর খান এলাকায় ছদ্মবেশে জুতা বিক্রি করছিলেন তিনি। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে শাহরাস্তি থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এই পলাতক আসামি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল বাসার। তিনি বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তপনের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। তারপরই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রাতেই শাহরাস্তি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

ছদ্মবেশ, ভ্যান আর জুতা—হত্যার পর পালিয়ে জীবনযুদ্ধে অভিনয়

একসময়ের চিতোষী পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপনের ছোট ভাই তপন এলাকায় প্রভাবশালী ও বখাটে হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। শেষমেশ ছদ্মবেশে ঢাকার গলিতে গলিতে জুতা বিক্রি করেও রক্ষা হলো না তার।

প্রেম, প্রতারণা, খুন—নৃশংসতার ভয়াবহ কাহিনী

মামলার অন্যতম আসামি সোনিয়া আক্তার ইতোমধ্যেই আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, আলমগীরের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক ঘিরে অসন্তোষ থেকেই মামা শ্বশুর তপনের সহযোগিতায় নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয় আলমগীরকে।

হত্যাকাণ্ডটি ঘটে গত মার্চ মাসে, শাহরাস্তির মনিপুর এলাকায়। এক প্রবাসীর বাড়ির ছাদে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।

রিমান্ডের আবেদন, জড়িতদের খোঁজে তৎপরতা

ওসি আবুল বাসার জানান, “তপনের বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হবে। তার কাছ থেকে আমরা জানতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডে আর কারা কারা জড়িত ছিল। পুরো ঘটনার মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারীদের বের করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

আলমগীর হত্যার রহস্যে জড়ানো প্রেম, প্রতারণা আর ক্ষমতার বলয়ের কাহিনী এলাকাজুড়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তপন মুখ খুললে বেরিয়ে আসতে পারে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই কাহিনী যেনো কোনো চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য—কিন্তু বাস্তবের নির্মমতা তার থেকেও ভয়াবহ। মানুষই মানুষকে কীভাবে বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতার শেষ সীমায় নিয়ে যায়, তা আবারও প্রমাণ হলো শাহরাস্তির এই ঘটনায়।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিবকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেলেন ব্যারিস্টার মো. কামাল উদ্দিন

শাহরাস্তির আলোচিত আলমগীর হত্যা: ছদ্মবেশে ঢাকায় ধরা পড়লো প্রধান আসামি তপন

আপডেট সময় : ০১:৪৬:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার আলোচিত দিনমজুর আলমগীর হত্যাকাণ্ডে নাটকীয় মোড়—মামলার প্রধান আসামি তাজুল ইসলাম তপন অবশেষে গ্রেপ্তার। ঢাকা শহরের উত্তর খান এলাকায় ছদ্মবেশে জুতা বিক্রি করছিলেন তিনি। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে শাহরাস্তি থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এই পলাতক আসামি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল বাসার। তিনি বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তপনের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। তারপরই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রাতেই শাহরাস্তি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

ছদ্মবেশ, ভ্যান আর জুতা—হত্যার পর পালিয়ে জীবনযুদ্ধে অভিনয়

একসময়ের চিতোষী পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপনের ছোট ভাই তপন এলাকায় প্রভাবশালী ও বখাটে হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। শেষমেশ ছদ্মবেশে ঢাকার গলিতে গলিতে জুতা বিক্রি করেও রক্ষা হলো না তার।

প্রেম, প্রতারণা, খুন—নৃশংসতার ভয়াবহ কাহিনী

মামলার অন্যতম আসামি সোনিয়া আক্তার ইতোমধ্যেই আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, আলমগীরের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক ঘিরে অসন্তোষ থেকেই মামা শ্বশুর তপনের সহযোগিতায় নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয় আলমগীরকে।

হত্যাকাণ্ডটি ঘটে গত মার্চ মাসে, শাহরাস্তির মনিপুর এলাকায়। এক প্রবাসীর বাড়ির ছাদে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।

রিমান্ডের আবেদন, জড়িতদের খোঁজে তৎপরতা

ওসি আবুল বাসার জানান, “তপনের বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হবে। তার কাছ থেকে আমরা জানতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডে আর কারা কারা জড়িত ছিল। পুরো ঘটনার মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারীদের বের করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

আলমগীর হত্যার রহস্যে জড়ানো প্রেম, প্রতারণা আর ক্ষমতার বলয়ের কাহিনী এলাকাজুড়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তপন মুখ খুললে বেরিয়ে আসতে পারে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই কাহিনী যেনো কোনো চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য—কিন্তু বাস্তবের নির্মমতা তার থেকেও ভয়াবহ। মানুষই মানুষকে কীভাবে বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতার শেষ সীমায় নিয়ে যায়, তা আবারও প্রমাণ হলো শাহরাস্তির এই ঘটনায়।

Facebook Comments Box