চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার আয়নাতলী গ্রামে ১৪ বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্র সাইদুল ইসলাম শাওনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. রাজু আহমেদের নেতৃত্বে পিবিআই চাঁদপুরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিদর্শনে শাওনের পরিবারের সদস্য ও একাধিক সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, ভিডিও যাচাই এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণসহ তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শেষ করেছি। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব।”
এর আগে ১৭ মে ২০২৫, আদালতের নির্দেশে মামলাটির নথি শাহরাস্তি থানা থেকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয় পিবিআই চাঁদপুরে। মামলাটি রেকর্ডভুক্ত হয় সিআর-৪১৫/২০২৪ নম্বরে।
মামলার বাদী শাওনের চাচা রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার ভাতিজার হত্যার বিচার চাইতে চাইতে আমরা আজ ক্লান্ত। এখন শুধু পিবিআইকে ভরসা করে আছি। আমরা বিচার চাই, দোষীরা শাস্তি পাক।”
শাওনের পরিবারের অভিযোগ, হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রমাণ করতে শুরু থেকেই একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। পরিবারের দাবি, শাওনের মা সালমা বেগমের সঙ্গে দুই আসামি নাইমুল ইসলাম ও জামাল হোসেনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। শাওন বিষয়টি জেনে ফেলায় তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে। এ বিষয়ে মামলার নথিতেও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর, নিজ ঘরে নিহত হন শাওন। প্রথমে মা সালমা বেগম ‘অপমৃত্যু’ মামলা দায়ের করলেও, এলাকাবাসী ও স্বজনদের তীব্র ক্ষোভে পরে শাওনের চাচা ২৬ ডিসেম্বর শাহরাস্তি আমলী আদালতে তিনজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শুরুতে মামলার তদন্তে দায়িত্ব পায় শাহরাস্তি থানা পুলিশ। তবে বাদীপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালতে ‘নারাজি’ দেন। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মামলার তদন্ত পিবিআইকে হস্তান্তর করে।
মামলায় বাদীপক্ষের শুনানি পরিচালনা করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর। তিনি বলেন, “এটি একটি স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ড। আমরা আশা করছি, পিবিআই এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করবে।”
শাওনের পরিবার দ্রুত তদন্ত শেষ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। স্থানীয়দের মতে, এ মামলার বিচার আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে এলাকায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। পরিবার বলছে—ন্যায়বিচার না পেলে সমাজে বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা টিকবে না।