ঢাকা , শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে শাহরাস্তির খাল: অস্তিত্ব রক্ষায় জেগে উঠুন এখনই

এক সময় খাল-বিল, জলাশয় ও সেচব্যবস্থায় সমৃদ্ধ শাহরাস্তি আজ নিজ ঐতিহ্য হারানোর মুখে। অযত্ন, অবহেলা এবং ব্যবহারকারীদের অসচেতনতায় শাহরাস্তির খালগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। অথচ এই খালগুলো শুধু পানি সরবরাহের উৎস নয়—এগুলো কৃষি, মাছ চাষ, পরিবেশ ও জনজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একেকটি প্রাকৃতিক জীবনরেখা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উপজেলায় এখনও ৮০টিরও বেশি খাল রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৫০টির অবস্থা সংকটাপন্ন। ঠাকুরবাজার, রায়শ্রী, টামটা ও কালীবাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর বড় অংশই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক খালের পাড়ে গড়ে উঠেছে বসতি বা দোকানপাট, কোথাও আবার খাল রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কৃষি উৎপাদনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর সেচ সমস্যার কারণে শাহরাস্তিতে বহু জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। অথচ পরিকল্পিত খাল সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই জমিগুলোতে একাধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হতো।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে—শুধু প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কি সমস্যার সমাধান সম্ভব? খাল রক্ষা ও সংরক্ষণে প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। স্থানীয়ভাবে সচেতনতা তৈরি, খালে ময়লা ফেলা বন্ধ, দখলের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং খালের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা—এসব পদক্ষেপ স্থানীয় জনগণের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব।

এছাড়া, শাহরাস্তির ইতিহাসে যেসব খাল একসময় জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, সেগুলোর গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবি। খাল রক্ষা মানে শুধু পানি ধরে রাখা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার একটি উদ্যোগ।

তাই এখনই সময় শাহরাস্তির মানুষদের জেগে ওঠার। খাল রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা হতে পারে প্রকৃত পরিবর্তনের শুরু। এ অঞ্চলের জলসম্পদ যদি আজ রক্ষা না করা যায়, তবে আগামী প্রজন্মকে আমরা উপহার দেব শুধু এক ফাঁকা নাম—‘খাল’ নামের এক হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিবকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেলেন ব্যারিস্টার মো. কামাল উদ্দিন

হারিয়ে যাচ্ছে শাহরাস্তির খাল: অস্তিত্ব রক্ষায় জেগে উঠুন এখনই

আপডেট সময় : ১১:০৮:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

এক সময় খাল-বিল, জলাশয় ও সেচব্যবস্থায় সমৃদ্ধ শাহরাস্তি আজ নিজ ঐতিহ্য হারানোর মুখে। অযত্ন, অবহেলা এবং ব্যবহারকারীদের অসচেতনতায় শাহরাস্তির খালগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। অথচ এই খালগুলো শুধু পানি সরবরাহের উৎস নয়—এগুলো কৃষি, মাছ চাষ, পরিবেশ ও জনজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একেকটি প্রাকৃতিক জীবনরেখা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উপজেলায় এখনও ৮০টিরও বেশি খাল রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৫০টির অবস্থা সংকটাপন্ন। ঠাকুরবাজার, রায়শ্রী, টামটা ও কালীবাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর বড় অংশই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক খালের পাড়ে গড়ে উঠেছে বসতি বা দোকানপাট, কোথাও আবার খাল রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কৃষি উৎপাদনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর সেচ সমস্যার কারণে শাহরাস্তিতে বহু জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। অথচ পরিকল্পিত খাল সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই জমিগুলোতে একাধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হতো।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে—শুধু প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কি সমস্যার সমাধান সম্ভব? খাল রক্ষা ও সংরক্ষণে প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। স্থানীয়ভাবে সচেতনতা তৈরি, খালে ময়লা ফেলা বন্ধ, দখলের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং খালের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা—এসব পদক্ষেপ স্থানীয় জনগণের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব।

এছাড়া, শাহরাস্তির ইতিহাসে যেসব খাল একসময় জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, সেগুলোর গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবি। খাল রক্ষা মানে শুধু পানি ধরে রাখা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার একটি উদ্যোগ।

তাই এখনই সময় শাহরাস্তির মানুষদের জেগে ওঠার। খাল রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা হতে পারে প্রকৃত পরিবর্তনের শুরু। এ অঞ্চলের জলসম্পদ যদি আজ রক্ষা না করা যায়, তবে আগামী প্রজন্মকে আমরা উপহার দেব শুধু এক ফাঁকা নাম—‘খাল’ নামের এক হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।

Facebook Comments Box