ঢাকা , রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

শাহরাস্তির আওয়ামী লীগ: ঈদেও উপেক্ষিত তৃণমূল, উত্তরণের পথ কোথায়?

৫ আগস্টের পর ধস নেমেছে শাহরাস্তির রাজনীতিতে, পলাতক নেতারা আর ফিরবেন তো?

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের আওয়ামী লীগ এখন কার্যত নেতৃত্বশূন্য। ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন। অথচ এই নেতারাই একসময় দলের ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজনীতির সব দিক। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে, ঈদেও কোনো নেতা কর্মীদের খবর নেয়নি, খোঁজ রাখেনি তাদের দুঃখ-কষ্টের। এক সময়ের সক্রিয় কর্মীরা এখন নিজেদের অবহেলিত ও পরিত্যক্ত মনে করছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ শুধু সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েনি, বরং কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। একদিকে নেতাদের পলায়ন, অন্যদিকে প্রশাসনের প্রভাবশালী মহলের চাপ—সব মিলিয়ে সাধারণ কর্মীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। অনেকের দাবি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গাফিলতির কারণেই আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতার দাপট দেখানো, প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলা, এবং দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া—এসব কারণেই আজকে দল সাংগঠনিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

এমন সংকটময় মুহূর্তে উত্তরণের পথ কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দল পুনর্গঠনই একমাত্র সমাধান হতে পারে। যারা প্রকৃত অর্থে দলের জন্য নিবেদিত, তাদের সামনে এনে নেতৃত্বের নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি আদৌ দলে থাকতে পারবেন, নাকি তাদের স্থলে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে? পাশাপাশি, তৃণমূলের কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। যদি সংগঠনকে পুনরায় শক্তিশালী করতে হয়, তবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে।

শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, শাহরাস্তির এই রাজনৈতিক অবস্থা সকল দলের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। রাজনীতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মীদের অবহেলা এবং জনসম্পৃক্ততা হারালে কিভাবে একটি শক্তিশালী সংগঠন ভেঙে পড়তে পারে, তা শাহরাস্তির বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিয়েছে। যে দলই হোক না কেন, যদি তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে একসময় তারাও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।

রাজনীতিতে স্থায়িত্ব ধরে রাখতে হলে জনসম্পৃক্ততা এবং সাংগঠনিক শক্তি বজায় রাখা জরুরি। শাহরাস্তির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সংশ্লিষ্ট দলগুলো আত্মসমালোচনা ও শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে হয়তো এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু যদি দলীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, তবে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে, যার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে দলকেই।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রাম থেকে গ্লোবাল ভাবনায় “পরানপুর মানব উন্নয়ন সংস্থা” — শিক্ষায় আলোকবর্তিকা জ্বালাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

শাহরাস্তির আওয়ামী লীগ: ঈদেও উপেক্ষিত তৃণমূল, উত্তরণের পথ কোথায়?

আপডেট সময় : ০১:৪৯:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫

৫ আগস্টের পর ধস নেমেছে শাহরাস্তির রাজনীতিতে, পলাতক নেতারা আর ফিরবেন তো?

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের আওয়ামী লীগ এখন কার্যত নেতৃত্বশূন্য। ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন। অথচ এই নেতারাই একসময় দলের ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজনীতির সব দিক। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে, ঈদেও কোনো নেতা কর্মীদের খবর নেয়নি, খোঁজ রাখেনি তাদের দুঃখ-কষ্টের। এক সময়ের সক্রিয় কর্মীরা এখন নিজেদের অবহেলিত ও পরিত্যক্ত মনে করছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ শুধু সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েনি, বরং কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। একদিকে নেতাদের পলায়ন, অন্যদিকে প্রশাসনের প্রভাবশালী মহলের চাপ—সব মিলিয়ে সাধারণ কর্মীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। অনেকের দাবি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গাফিলতির কারণেই আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতার দাপট দেখানো, প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলা, এবং দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া—এসব কারণেই আজকে দল সাংগঠনিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

এমন সংকটময় মুহূর্তে উত্তরণের পথ কী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দল পুনর্গঠনই একমাত্র সমাধান হতে পারে। যারা প্রকৃত অর্থে দলের জন্য নিবেদিত, তাদের সামনে এনে নেতৃত্বের নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি আদৌ দলে থাকতে পারবেন, নাকি তাদের স্থলে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে? পাশাপাশি, তৃণমূলের কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। যদি সংগঠনকে পুনরায় শক্তিশালী করতে হয়, তবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে।

শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, শাহরাস্তির এই রাজনৈতিক অবস্থা সকল দলের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। রাজনীতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মীদের অবহেলা এবং জনসম্পৃক্ততা হারালে কিভাবে একটি শক্তিশালী সংগঠন ভেঙে পড়তে পারে, তা শাহরাস্তির বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিয়েছে। যে দলই হোক না কেন, যদি তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে একসময় তারাও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।

রাজনীতিতে স্থায়িত্ব ধরে রাখতে হলে জনসম্পৃক্ততা এবং সাংগঠনিক শক্তি বজায় রাখা জরুরি। শাহরাস্তির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সংশ্লিষ্ট দলগুলো আত্মসমালোচনা ও শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে হয়তো এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু যদি দলীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, তবে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে, যার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে দলকেই।

Facebook Comments Box