ঢাকা , রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে বোগদাদের ‘একচ্ছত্র দখল’: প্রশাসন নীরব, যাত্রীরা অসহায়!

চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে বোগদাদ পরিবহনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই সড়ক ব্যবহার করলেও তাদের যাতায়াত নিরাপদ নয়। কারণ, এই রুটে বোগদাদ পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো বাস চলতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই পরিবহন সিন্ডিকেটের কারণে অন্যান্য পরিবহন সংস্থাগুলো ধ্বংসের মুখে পড়েছে, আর সাধারণ যাত্রীরা বেছে নিতে পারছে না বিকল্প কোনো সেবা।

বেপরোয়া গতির মরণফাঁদ

বোগদাদ পরিবহনের চালকদের বেপরোয়া বাস চালনার কারণে এই রুটে দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে একাধিক মারাত্মক দুর্ঘটনার জন্য বোগদাদ পরিবহন দায়ী থাকলেও, কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনা:

ডিসেম্বর ২০২৪: হাজীগঞ্জের বাকিলা পূর্ব বাজার এলাকায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী হারুন অর রশিদ নিহত হন।

ফেব্রুয়ারি ২০২৩: চাঁদপুর সদর উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকায় বোগদাদ পরিবহনের বাসের ধাক্কায় তিনজন নিহত হন।

মে ২০২২: হাজীগঞ্জের গোগরা এলাকায় বাসচাপায় তিন বছরের শিশু ইভা প্রাণ হারায়।

ডিসেম্বর ২০২১: হাজীগঞ্জের বলাখাল ধেররা এলাকায় বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের পথে বসিয়ে দিয়েছে বোগদাদ পরিবহন

এক সময় এই রুটে ঈগল সুপার, আজমির ও রিল্যাক্স পরিবহন চলাচল করত। কিন্তু বোগদাদ পরিবহনের প্রভাব ও রাজনৈতিক শক্তির কারণে এসব পরিবহন সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন এই রুটে বোগদাদের বাইরে অন্য কোনো পরিবহন প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে পারছে না।

আইদি পরিবহনের রোড পারমিট আটকে দেওয়া হলো কেন?

চাঁদপুরের মালিকানাধীন আইদি পরিবহন চাঁদপুর-কুমিল্লা রুটের জন্য রোড পারমিট পেলেও, তারা কুমিল্লায় প্রবেশ করতে পারছে না। স্থানীয়রা বলছেন, বোগদাদ পরিবহনের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে কুমিল্লার প্রশাসন আইদি পরিবহনকে অনুমতি দিচ্ছে না।

একজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যদি বিকল্প পরিবহন পেতাম, তাহলে বোগদাদের গাড়িতে উঠতাম না। কিন্তু অন্য কাউকে ব্যবসা করতেই দেওয়া হচ্ছে না।”

প্রশাসনের নীরবতা ও জনগণের দাবি

যাত্রীদের অভিযোগ, বারবার দুর্ঘটনার পরও প্রশাসন বোগদাদ পরিবহনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের ধারণা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতা বন্ধ করে রেখেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি তুলেছেন, “বোগদাদ পরিবহনের এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। অন্যান্য পরিবহন সংস্থাগুলোকে রুট পারমিট দিতে হবে, যাতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান উন্নত হয়।”

সরকার ও প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়ক বোগদাদ পরিবহনের একচ্ছত্র রাজত্বের কবলে পড়ে আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে। এখন দেখার বিষয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসন আদৌ কোনো উদ্যোগ নেয় কি না?

Facebook Comments Box
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রাম থেকে গ্লোবাল ভাবনায় “পরানপুর মানব উন্নয়ন সংস্থা” — শিক্ষায় আলোকবর্তিকা জ্বালাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে বোগদাদের ‘একচ্ছত্র দখল’: প্রশাসন নীরব, যাত্রীরা অসহায়!

আপডেট সময় : ০৪:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে বোগদাদ পরিবহনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই সড়ক ব্যবহার করলেও তাদের যাতায়াত নিরাপদ নয়। কারণ, এই রুটে বোগদাদ পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো বাস চলতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই পরিবহন সিন্ডিকেটের কারণে অন্যান্য পরিবহন সংস্থাগুলো ধ্বংসের মুখে পড়েছে, আর সাধারণ যাত্রীরা বেছে নিতে পারছে না বিকল্প কোনো সেবা।

বেপরোয়া গতির মরণফাঁদ

বোগদাদ পরিবহনের চালকদের বেপরোয়া বাস চালনার কারণে এই রুটে দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে একাধিক মারাত্মক দুর্ঘটনার জন্য বোগদাদ পরিবহন দায়ী থাকলেও, কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনা:

ডিসেম্বর ২০২৪: হাজীগঞ্জের বাকিলা পূর্ব বাজার এলাকায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী হারুন অর রশিদ নিহত হন।

ফেব্রুয়ারি ২০২৩: চাঁদপুর সদর উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকায় বোগদাদ পরিবহনের বাসের ধাক্কায় তিনজন নিহত হন।

মে ২০২২: হাজীগঞ্জের গোগরা এলাকায় বাসচাপায় তিন বছরের শিশু ইভা প্রাণ হারায়।

ডিসেম্বর ২০২১: হাজীগঞ্জের বলাখাল ধেররা এলাকায় বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের পথে বসিয়ে দিয়েছে বোগদাদ পরিবহন

এক সময় এই রুটে ঈগল সুপার, আজমির ও রিল্যাক্স পরিবহন চলাচল করত। কিন্তু বোগদাদ পরিবহনের প্রভাব ও রাজনৈতিক শক্তির কারণে এসব পরিবহন সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন এই রুটে বোগদাদের বাইরে অন্য কোনো পরিবহন প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে পারছে না।

আইদি পরিবহনের রোড পারমিট আটকে দেওয়া হলো কেন?

চাঁদপুরের মালিকানাধীন আইদি পরিবহন চাঁদপুর-কুমিল্লা রুটের জন্য রোড পারমিট পেলেও, তারা কুমিল্লায় প্রবেশ করতে পারছে না। স্থানীয়রা বলছেন, বোগদাদ পরিবহনের প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে কুমিল্লার প্রশাসন আইদি পরিবহনকে অনুমতি দিচ্ছে না।

একজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যদি বিকল্প পরিবহন পেতাম, তাহলে বোগদাদের গাড়িতে উঠতাম না। কিন্তু অন্য কাউকে ব্যবসা করতেই দেওয়া হচ্ছে না।”

প্রশাসনের নীরবতা ও জনগণের দাবি

যাত্রীদের অভিযোগ, বারবার দুর্ঘটনার পরও প্রশাসন বোগদাদ পরিবহনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের ধারণা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতা বন্ধ করে রেখেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি তুলেছেন, “বোগদাদ পরিবহনের এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। অন্যান্য পরিবহন সংস্থাগুলোকে রুট পারমিট দিতে হবে, যাতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান উন্নত হয়।”

সরকার ও প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়ক বোগদাদ পরিবহনের একচ্ছত্র রাজত্বের কবলে পড়ে আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে। এখন দেখার বিষয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসন আদৌ কোনো উদ্যোগ নেয় কি না?

Facebook Comments Box