ঢাকার ব্যস্ত জীবনে টিকে থাকতে বহু শিক্ষার্থী টিউশনকে জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য এটি শুধু অতিরিক্ত আয় নয়, বরং নিজের খরচ চালানোর প্রধান উপায়। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে ক্লাস ও টিউশনের ব্যস্ততা সামলানো যেমন কঠিন, তেমনি ঈদের খরচ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তাও তৈরি হয়।
রমজান এলে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আসে। ক্লাসের পাশাপাশি অ্যাসাইনমেন্ট ও টিউশনের চাপ বেড়ে যায়। রোজা রেখে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্টকর হয়ে ওঠে। ঢাকার বিভিন্ন মেস ও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরা সাধারণত গ্রুপ করে ইফতার বানান কিংবা কম খরচে বাইরে খাওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইফতার আয়োজনেও অংশ নেন, তবে ভালো খাবারের চেয়ে স্বল্প খরচে ইফতার সেরে নেওয়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে।
অনেক শিক্ষার্থী জানান, রমজানে টিউশনের সময়সূচিতে পরিবর্তন আসে। বেশিরভাগ অভিভাবক ইফতারের পর বা তারাবির পরে টিউশন রাখতে চান, ফলে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এতে ক্লান্তি আরও বাড়ে। কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকরা টিউশন বন্ধ করে দেন বা পড়ানোর সময় কমিয়ে দেন, যা শিক্ষার্থীদের আয়ের ওপর প্রভাব ফেলে। তবে বাড়তি টিউশন পাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।
ঈদ মানেই নতুন পোশাকের আনন্দ, কিন্তু সীমিত আয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকের জন্য সেটি এক বিলাসিতা। অনেকেই ঈদের কেনাকাটা বা বাড়ি ফেরার খরচ জোগাড় করতে বাড়তি টিউশন খোঁজেন, কেউ কেউ কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পার্ট-টাইম কাজ করেন। তবে পর্যাপ্ত টিউশন না থাকলে ঈদের পরিকল্পনা নিয়েও সংযম করতে হয়। কিছু শিক্ষার্থী চাইলেও বাড়ি ফিরতে পারেন না, কারণ টিউশন ছেড়ে দিলে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ কেউ ঈদের দিনও ঢাকায় থেকে যান, ছাত্রাবাসে বা বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন, যদিও পরিবার ছেড়ে ঈদ কাটানো তাদের জন্য কঠিন অভিজ্ঞতা।
তবে কিছু শিক্ষার্থী ঈদ বোনাসের প্রত্যাশা করেন। অনেক অভিভাবক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ঈদের আগে উপহার বা বোনাস দিয়ে থাকেন, যদিও এটি নির্ভর করে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের আর্থিক সামর্থ্যের ওপর।
রমজান ও ঈদ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য শুধুই উৎসব নয়, এটি বেঁচে থাকার সংগ্রামেরও অংশ। টিউশনই তাদের জীবনের মূল চালিকা শক্তি, তাই রোজা রেখে, ক্লান্তি ভুলে, ঈদের নতুন পোশাকের স্বপ্ন ত্যাগ করেও তারা কাজ চালিয়ে যান। ঈদ মানেই নতুন পোশাক, সুস্বাদু খাবার আর আনন্দ, কিন্তু এই শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদ অনেক সময় দায়িত্ববোধের আরেক নাম হয়ে ওঠে। তবুও সীমিত সাধ্যে তারা হাসিমুখে ঈদ উদযাপন করেন, কারণ বাস্তবতার কষ্ট থাকলেও আনন্দের সংযম মানিয়ে নেওয়াই তাদের জীবনের শিক্ষা।