ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
শিরোনাম:
শাহরাস্তি থানার গৌরবময় অর্জন: অভিন্ন মানদণ্ডে চার বিভাগে পুরস্কার পেলেন কর্মকর্তারা চাঁদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে ১২৯৫ পিস ইয়াবা ও ৪৫ গ্রাম গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ইতিহাস কি নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে? ১৯৪১ ও ২০২৫ সালের আয়নায় বিশ্ব শাহরাস্তিতে রাগৈ ফাউন্ডেশনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ: ফজরের নামাজ, দৌড় আর স্বাস্থ্যকর নাশতায় নতুন সকালের সূচনা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় শাওনের পরিবার: শাহরাস্তির কিশোর হত্যা মামলার তদন্তে পিবিআই শাহরাস্তিতে পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেফতার ২ মাদক ব্যবসায়ী শাহরাস্তিতে গ্যারেজের তালা ভেঙে এক রাতে তিনটি অটোরিকশা চুরি: অজ্ঞাত চক্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ রশিদপুর একতা বন্ধনের মানবিক উদ্যোগ: সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যুবককে আর্থিক সহায়তা শাহরাস্তিতে গাছে উস্কানিমূলক স্টিকার: জামায়াতের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরির অভিযোগ ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা: শাহরাস্তিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

নারী শিক্ষা বিস্তারে অগ্রপথিক, উন্নয়ন চিন্তায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন: আজ ড. এম.এ. সাত্তারের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

বাংলাদেশের প্রশাসনিক, শিক্ষাবিষয়ক ও সামাজিক অগ্রগতির পেছনে যাঁদের অবদান ইতিহাসে অমলিন হয়ে রয়েছে, তাঁদের অন্যতম একজন ড. এম.এ. সাত্তার। আজ ২৬ মে, তাঁর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তাঁর এই মৃত্যু আজও অনেকের কাছে রহস্যাবৃত।

একজন আদর্শ সমাজসেবক, দক্ষ প্রশাসক, সুদূরদর্শী অর্থনীতিবিদ, নারী শিক্ষার পথিকৃৎ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের এক নিঃস্বার্থ সংগঠক হিসেবে ড. সাত্তারের জীবন ও কর্ম আজও প্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে।

শুরু যেখান থেকে

১৯৩২ সালের ১ জুন চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলার নাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. সাত্তার। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও, তাঁর প্রগতিশীল শিক্ষাচিন্তা ও মানবিক মানসিকতা তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। মা করফুলেন্নেছার শিক্ষানুরাগই ছিল তাঁর প্রাথমিক অনুপ্রেরণা।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনে তিনি বারবার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। মেট্রিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম হাই মাদ্রাসা থেকে প্রথম স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ থেকে বোর্ডে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

একজন দূরদর্শী প্রশাসক

১৯৬০ সালে সিএসপি অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে মৌলভীবাজার থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের নানা প্রান্তে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা এবং উন্নয়ন চিন্তা তাঁকে স্বতন্ত্র অবস্থানে নিয়ে যায়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে থাকাকালীন তাঁর গৃহীত শিক্ষা ও নারী উন্নয়নকেন্দ্রিক পদক্ষেপগুলো ছিল সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী অবদান

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত উপবৃত্তি কর্মসূচির প্রবর্তক ছিলেন ড. সাত্তার। নারী শিক্ষাকে সমাজ পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার হিসেবে দেখতেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টাতেই শাহারাস্তি উপজেলায় শিক্ষার হার পৌঁছেছে ৯৬ শতাংশে, যা একটি উপজেলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিরল।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও আন্তর্জাতিক সংযোগ

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে কারাগারে বন্দি করে। দেশ স্বাধীনের পরেও তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ভাবনায় অবদান রেখেছেন। আইকম (ICOM) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মালয়েশিয়া প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সফরে গিয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

ব্যক্তিগত জীবনে এক অনন্য প্রেমগাঁথা

উচ্চশিক্ষার সুবাদে বিলেতে গিয়ে পরিচয়, প্রেম এবং পরে বিয়ে হয় ব্রিটিশ নাগরিক ড. এলেন মেরি হেরিংটনের সঙ্গে। তাঁরা চার সন্তানের জনক-জননী হন। ড. মেরি ২০০৫ সালে লন্ডনে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আজকের প্রজন্মের জন্য শিক্ষা

ড. সাত্তারের মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে আজ তাঁর জন্মভূমি শাহারাস্তি এবং প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর জীবন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে এক উদাহরণ, কীভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করে একজন মানুষ নিজেকে জাতির সেবায় উৎসর্গ করতে পারে।

আজ আমরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ড. এম.এ. সাত্তারের মতো এক আলোকিত মানুষকে, যাঁর কর্মচিন্তা আজও আমাদের পথ দেখায়।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তি থানার গৌরবময় অর্জন: অভিন্ন মানদণ্ডে চার বিভাগে পুরস্কার পেলেন কর্মকর্তারা

নারী শিক্ষা বিস্তারে অগ্রপথিক, উন্নয়ন চিন্তায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন: আজ ড. এম.এ. সাত্তারের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

Update Time : ১১:০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

বাংলাদেশের প্রশাসনিক, শিক্ষাবিষয়ক ও সামাজিক অগ্রগতির পেছনে যাঁদের অবদান ইতিহাসে অমলিন হয়ে রয়েছে, তাঁদের অন্যতম একজন ড. এম.এ. সাত্তার। আজ ২৬ মে, তাঁর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তাঁর এই মৃত্যু আজও অনেকের কাছে রহস্যাবৃত।

একজন আদর্শ সমাজসেবক, দক্ষ প্রশাসক, সুদূরদর্শী অর্থনীতিবিদ, নারী শিক্ষার পথিকৃৎ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের এক নিঃস্বার্থ সংগঠক হিসেবে ড. সাত্তারের জীবন ও কর্ম আজও প্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে।

শুরু যেখান থেকে

১৯৩২ সালের ১ জুন চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলার নাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. সাত্তার। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও, তাঁর প্রগতিশীল শিক্ষাচিন্তা ও মানবিক মানসিকতা তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। মা করফুলেন্নেছার শিক্ষানুরাগই ছিল তাঁর প্রাথমিক অনুপ্রেরণা।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনে তিনি বারবার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। মেট্রিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম হাই মাদ্রাসা থেকে প্রথম স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ থেকে বোর্ডে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

একজন দূরদর্শী প্রশাসক

১৯৬০ সালে সিএসপি অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে মৌলভীবাজার থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের নানা প্রান্তে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা এবং উন্নয়ন চিন্তা তাঁকে স্বতন্ত্র অবস্থানে নিয়ে যায়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে থাকাকালীন তাঁর গৃহীত শিক্ষা ও নারী উন্নয়নকেন্দ্রিক পদক্ষেপগুলো ছিল সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী অবদান

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত উপবৃত্তি কর্মসূচির প্রবর্তক ছিলেন ড. সাত্তার। নারী শিক্ষাকে সমাজ পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার হিসেবে দেখতেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টাতেই শাহারাস্তি উপজেলায় শিক্ষার হার পৌঁছেছে ৯৬ শতাংশে, যা একটি উপজেলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিরল।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও আন্তর্জাতিক সংযোগ

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সক্রিয় ভূমিকার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে কারাগারে বন্দি করে। দেশ স্বাধীনের পরেও তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ভাবনায় অবদান রেখেছেন। আইকম (ICOM) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মালয়েশিয়া প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সফরে গিয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

ব্যক্তিগত জীবনে এক অনন্য প্রেমগাঁথা

উচ্চশিক্ষার সুবাদে বিলেতে গিয়ে পরিচয়, প্রেম এবং পরে বিয়ে হয় ব্রিটিশ নাগরিক ড. এলেন মেরি হেরিংটনের সঙ্গে। তাঁরা চার সন্তানের জনক-জননী হন। ড. মেরি ২০০৫ সালে লন্ডনে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আজকের প্রজন্মের জন্য শিক্ষা

ড. সাত্তারের মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে আজ তাঁর জন্মভূমি শাহারাস্তি এবং প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর জীবন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে এক উদাহরণ, কীভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করে একজন মানুষ নিজেকে জাতির সেবায় উৎসর্গ করতে পারে।

আজ আমরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ড. এম.এ. সাত্তারের মতো এক আলোকিত মানুষকে, যাঁর কর্মচিন্তা আজও আমাদের পথ দেখায়।

Facebook Comments Box