বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অবিচল প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। ত্যাগ, সাহস এবং আপোষহীন অবস্থান নিয়ে যিনি দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ, গুলশানের বাসভবনে চিকিৎসাধীন; তবুও তার রাজনৈতিক প্রত্যয়ে কোনো চিড় ধরেনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে তিনি শুধু একজন রাজনীতিক নন, এক জীবন্ত ইতিহাস।
এই সময়েই দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী, চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু পারিবারিক পুনর্মিলন নয়, বরং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এক নতুন উত্তাপের নাম। তিনি এমন এক মুহূর্তে দেশে ফিরলেন, যখন দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তৈরি হচ্ছে নতুন সমীকরণ।
১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বদানকারী। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সরাসরি নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি হন প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এরপর দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, মিথ্যা মামলা, জেল-জুলুম, গৃহবন্দিত্ব—সবকিছুই তাকে বাধা দিতে পারেনি। ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, তিনি ও তারেক রহমান দুজনেই রাজনৈতিক টার্গেটে পরিণত হন। তবুও কোনো ‘কমপ্রোমাইজ’ করেননি। তার এই আপোষহীন ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অনন্য করে তুলেছে।
ডা. জোবায়দা রহমান শুধু তারেক রহমানের স্ত্রী নন; তিনি একজন মেধাবী চিকিৎসক, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. মো. সৈয়দা ইকবাল বানুর কন্যা। ২০০৮ সালের পর থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে কিছু মামলার অভিযোগ ছিল, সেগুলোর আইনি ভিত্তি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এবং সর্বশেষ খবরে জানা যায়, তার নামে বর্তমানে দেশে আর কোনো সক্রিয় মামলা নেই।
তার এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য এক ইতিবাচক বার্তা বহন করে। নেতাকর্মীদের মাঝে এটি নবউদ্দীপনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তার যোগসূত্র হতে পারে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এই মুহূর্তে যখন একদিকে আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, অন্যদিকে পরিবারে ও রাজনীতিতে ফিরে আসছেন ডা. জোবায়দা—এই ঘটনা শুধুই একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এটি আবেগ, প্রত্যয় এবং উত্তরাধিকারবোধের মিশেল। একদিকে যেমন ইতিহাসের ধারক খালেদা জিয়া, অন্যদিকে সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠছেন জোবায়দা রহমান।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও সাহসিকতার এক জীবন্ত উদাহরণ বেগম খালেদা জিয়া। তার পাশে তারেক রহমান ও এখন দেশে থাকা ডা. জোবায়দা রহমান—একটি পরিবারের প্রতিটি স্তম্ভ আজ রাজনীতির ভিন্ন ভিন্ন পর্বে। আগামী দিনে এই পরিবার ও বিএনপির ভূমিকা কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ফিরে আসা নিছক ব্যক্তিগত নয়—এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা, একটি সম্ভাবনার নাম।