চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের দৈলবাড়ী এলাকায় সরকারি সংযোগ খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এক দশকের বেশি সময় ধরে হোসেনপুর–পরাণপুর–বলশিদ–দৈলবাড়ী সংযোগ খালটি ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ধানক্ষেত ও মাছের ঘের। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালটির জায়গা সিএস ৪০ ও ৪১ এবং বিএস ৮৫–৮৮ নম্বর দাগে সরকারিভাবে নথিভুক্ত থাকলেও হারুনুর রশিদ, কবির আহমেদ ও আবুল বাসার নামের তিন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে খাল দখলে রেখে সেখানে ধান চাষাবাদ ও মাছ চাষ করছেন। খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষার শুরুতেই আশপাশের প্রায় ১৫টি বাড়ি ও ফসলি জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
প্রবীণ বাসিন্দা নুরু মিয়া (৮২) বলেন, “একসময় আমরা এই খাল দিয়ে নৌকা চালিয়ে ধান বাড়িতে নিয়ে আসতাম। এখন তো খালের চিহ্নও নেই।” একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম, শহিদ মিয়া, রবিউল মুন্সী ও জয়নাল জানান, “বছরের পর বছর খালের জায়গায় পড়ে থাকে বৃষ্টির পানি। আমাদের ঘরবাড়ি ডুবে যায়, ফসল নষ্ট হয়।”
অভিযোগ রয়েছে, এলাকাবাসী একাধিকবার টামটা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক দর্জিকে বিষয়টি জানালেও কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন জানান, “বিষয়টি চেয়ারম্যানকে বারবার জানিয়েছি। সরেজমিন পরিদর্শনের পরও কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।”
এছাড়া জলাবদ্ধতার আরেকটি বড় কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানান, খালের মুখে উপযুক্ত কালভার্ট না বসিয়ে একটি সরু পাইপ বসানো হয়েছে, যা দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। এতে মুন্সী, শিকারী, ব্যাপারী, হাজী ও সরকার পরিবারসহ অন্তত ১৫টি পরিবার অল্প বৃষ্টিতেই পানিবন্দী হয়ে পড়ছে।
চেয়ারম্যান ওমর ফারুক দর্জির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা দ্রুত খাল পুনরুদ্ধার ও দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালীদের দাপটে বছরের পর বছর দখলদারিত্ব চললেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ অবস্থায় সরকারি খাল পুনরুদ্ধার এবং স্বাভাবিক জলপ্রবাহ নিশ্চিত করা শুধু এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার স্বার্থেও এখন অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।