ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
শিরোনাম:
শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি কাটায় মোবাইল কোর্টে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হজ পালনে সৌদি আরব গমন করছেন মোঃ আবুল কালাম ও সহধর্মিণী শাহরাস্তিতে কৃষিজমির মাটি কাটায় মোবাইল কোর্ট: এক ব্যক্তি কারাদণ্ড, ট্রাক্টর জব্দ শাহরাস্তিতে কৃষিজমির মাটি কাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গাজীপুরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ডে শাহরাস্তি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সাড়া জাগানো উপস্থিতি গাজীপুর -৩ আসনের জনগণের সেবক হতে চায় ডাঃ ক্যাঃ (অবঃ) এম এ আঃ সালাম আকন্দ রাত হলেই আলোয় ঝলমল শাহরাস্তির ‘রাগৈ কাঠের মসজিদ’ প্রবাসে রুজি, দেশে হাহাকার: শাহরাস্তিতে ওমান প্রবাসীর বাড়িতে হামলা, আহত মা-বোন ৭৫ বছর বয়সী বিধবা গৃহবধূকে আপন ভাই ও ভাতিজাদের মারধর, থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের

‘নকলের আগুনে পুড়ছে শিক্ষা’: শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ের প্রতারণায় নকলমুক্ত শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলাতেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে একের পর এক নকলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর নজরদারি ও নির্দেশনা সত্ত্বেও পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে নকলের ঘটনা ঘটে চলেছে, যা জেলা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক গভীর সংকেত। বিশেষ করে কিছু উপজেলায় কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে নকল সরবরাহ, প্রশ্নফাঁস চেষ্টাসহ নানা অপতৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা ও শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

প্রশাসন ইতোমধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, পুলিশি নজরদারি, এবং পরীক্ষার হলে মোবাইল নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে অভিযানে নকলের সরঞ্জামসহ শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে বহিষ্কার ও জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও দেখা যাচ্ছে, কিছু জায়গায় সামাজিক চাপ ও অভিভাবকদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা প্রশাসনিক পদক্ষেপকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষার মূল অংশীদার হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষক সমাজকে এখন শুধু পাঠদানে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। তারা যেন পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করেন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারে—নকল করে অর্জিত সাফল্য ক্ষণস্থায়ী, বরং পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে অর্জিত জ্ঞানই জীবনের প্রকৃত পথপ্রদর্শক।

শিক্ষকদের উচিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে শিক্ষার্থীদের কাছে পড়া মুখস্থ নয়, বরং বোধগম্য হয়। নিয়মিত অনুশীলন, কুইজ, মডেল টেস্টের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতিতেও বৈচিত্র্য আনা জরুরি—শুধু লিখিত পরীক্ষায় না রেখে মৌখিক, প্রজেক্ট ও বাস্তবধর্মী কাজের ওপর জোর দিতে হবে।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদেরও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাদের নিজেদের দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শর্টকাট নয়, বরং ধৈর্য ও পরিশ্রমই একমাত্র পথ। পড়ালেখাকে যদি তারা ভবিষ্যতের জীবনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তারা নিজেরাই নকল থেকে দূরে থাকবে।

অভিভাবকদেরও মানসিকতা বদলাতে হবে। কেবল ভালো গ্রেড নয়, সন্তান যেন সততার সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে—এই মনোভাব গড়ে তোলাই জরুরি। সন্তান পরীক্ষায় খারাপ করলে তারা যেন তাকে নাকচ না করে, বরং পাশে থেকে সহায়তা করেন।

চাঁদপুরে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং নকল প্রতিরোধে প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রশাসন, অভিভাবক-শিক্ষক ফোরাম, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও গণমাধ্যম একযোগে কাজ করলে তবেই এই দীর্ঘদিনের সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব হবে।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি কাটায় মোবাইল কোর্টে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

‘নকলের আগুনে পুড়ছে শিক্ষা’: শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ের প্রতারণায় নকলমুক্ত শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

Update Time : ০৪:২৩:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলাতেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে একের পর এক নকলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর নজরদারি ও নির্দেশনা সত্ত্বেও পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে নকলের ঘটনা ঘটে চলেছে, যা জেলা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক গভীর সংকেত। বিশেষ করে কিছু উপজেলায় কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে নকল সরবরাহ, প্রশ্নফাঁস চেষ্টাসহ নানা অপতৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা ও শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

প্রশাসন ইতোমধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, পুলিশি নজরদারি, এবং পরীক্ষার হলে মোবাইল নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে অভিযানে নকলের সরঞ্জামসহ শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে বহিষ্কার ও জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও দেখা যাচ্ছে, কিছু জায়গায় সামাজিক চাপ ও অভিভাবকদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা প্রশাসনিক পদক্ষেপকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষার মূল অংশীদার হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষক সমাজকে এখন শুধু পাঠদানে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। তারা যেন পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করেন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারে—নকল করে অর্জিত সাফল্য ক্ষণস্থায়ী, বরং পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে অর্জিত জ্ঞানই জীবনের প্রকৃত পথপ্রদর্শক।

শিক্ষকদের উচিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে শিক্ষার্থীদের কাছে পড়া মুখস্থ নয়, বরং বোধগম্য হয়। নিয়মিত অনুশীলন, কুইজ, মডেল টেস্টের মাধ্যমে তারা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতিতেও বৈচিত্র্য আনা জরুরি—শুধু লিখিত পরীক্ষায় না রেখে মৌখিক, প্রজেক্ট ও বাস্তবধর্মী কাজের ওপর জোর দিতে হবে।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদেরও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাদের নিজেদের দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শর্টকাট নয়, বরং ধৈর্য ও পরিশ্রমই একমাত্র পথ। পড়ালেখাকে যদি তারা ভবিষ্যতের জীবনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তারা নিজেরাই নকল থেকে দূরে থাকবে।

অভিভাবকদেরও মানসিকতা বদলাতে হবে। কেবল ভালো গ্রেড নয়, সন্তান যেন সততার সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে—এই মনোভাব গড়ে তোলাই জরুরি। সন্তান পরীক্ষায় খারাপ করলে তারা যেন তাকে নাকচ না করে, বরং পাশে থেকে সহায়তা করেন।

চাঁদপুরে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং নকল প্রতিরোধে প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রশাসন, অভিভাবক-শিক্ষক ফোরাম, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও গণমাধ্যম একযোগে কাজ করলে তবেই এই দীর্ঘদিনের সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব হবে।

Facebook Comments Box