রাত সাড়ে দশটা। সবাই যখন বৈশাখী উৎসবে মগ্ন, তখনই চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের দোয়াবাড়ীতে এক দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরীর বিয়ের আয়োজন চলছিল পুরোদমে। গোপন এই বাল্যবিবাহের খবর পৌঁছে যায় উপজেলা প্রশাসনের কানে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার।
ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেট পৌঁছানোর আগেই বরপক্ষ পালিয়ে যায়। তবে উপস্থিত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বাড়ির লোকজন প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করে পুরো বিষয়টি সামনে আনেন। এই সাহসী অভিযানে শাহরাস্তি থানা পুলিশের একটি দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মেয়েটির মা স্বীকার করেন, সমাজ ও আত্মীয়স্বজনের চাপের মুখে না বুঝেই মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন, মেয়ের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার বিয়ে দেবেন না।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—প্রশাসন শুধু নিয়ম প্রয়োগকারী নয়, সামাজিক নিরাপত্তার বলিষ্ঠ অভিভাবকও। নিরুপম মজুমদার-এর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও দায়বদ্ধ মনোভাব শত শত মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বর্তমানে দেশে বাল্যবিবাহ একটি জটিল সামাজিক সমস্যা। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন ও নিয়ম থাকলেও মাঠপর্যায়ে সচেতনতা ও সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া এই অনৈতিক প্রথা রোধ করা কঠিন। তাই প্রশাসনের এমন তৎপরতা সমাজে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছায় এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—সচেতন প্রশাসন, সহযোগী জনতা এবং দৃঢ় আইনি পদক্ষেপ একত্রে কাজ করলে বাল্যবিবাহের মতো সমাজবিরোধী প্রথা রোধ করা সম্ভব। শাহরাস্তির এই ঘটনা সমাজের জন্য এক অনন্য উদাহরণ।