ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
শিরোনাম:
শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি কাটায় মোবাইল কোর্টে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হজ পালনে সৌদি আরব গমন করছেন মোঃ আবুল কালাম ও সহধর্মিণী শাহরাস্তিতে কৃষিজমির মাটি কাটায় মোবাইল কোর্ট: এক ব্যক্তি কারাদণ্ড, ট্রাক্টর জব্দ শাহরাস্তিতে কৃষিজমির মাটি কাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গাজীপুরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ডে শাহরাস্তি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সাড়া জাগানো উপস্থিতি গাজীপুর -৩ আসনের জনগণের সেবক হতে চায় ডাঃ ক্যাঃ (অবঃ) এম এ আঃ সালাম আকন্দ রাত হলেই আলোয় ঝলমল শাহরাস্তির ‘রাগৈ কাঠের মসজিদ’ প্রবাসে রুজি, দেশে হাহাকার: শাহরাস্তিতে ওমান প্রবাসীর বাড়িতে হামলা, আহত মা-বোন ৭৫ বছর বয়সী বিধবা গৃহবধূকে আপন ভাই ও ভাতিজাদের মারধর, থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের

বাংলার গর্ব: মাহবুব অর রশিদ—৪৯৫ উপজেলা জয় করে গড়লেন ভ্রমণের জীবন্ত ইতিহাস

বাংলাদেশের ভৌগোলিক মানচিত্রের প্রতিটি বিন্দুয়েই যেন তার পদচিহ্ন। দীর্ঘ আট বছর ধরে এক অসম্ভব স্বপ্ন বুকে লালন করে অবশেষে দেশের ৪৯৫টি উপজেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করছেন মাহবুব অর রশিদ—এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়, এক রাতের জন্যও কোনো হোটেলে থাকেননি! মানুষের আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব আর আত্মার সম্পর্কই ছিল তার যাত্রার প্রধান পাথেয়।

২০১৭ সালে অনার্স শেষ করেই সরকারি চাকরিতে যোগ দেন মাহবুব। সেই বছর থেকেই তার ভ্রমণের শুরু। ২০২০ সালের মধ্যে তিনি ৬৪ জেলার সফর শেষ করেন। এরপর শুরু হয় আরও গভীর, আরও বিশাল এক পরিকল্পনা—বাংলাদেশের ৪৯৫টি উপজেলার প্রতিটিতে পা রাখা, সেখানকার প্রকৃতি, জনজীবন, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য উপলব্ধি করা।

২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় পৌঁছানোর মাধ্যমে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করছেন। এটি হবে তার ৪৯৫তম উপজেলা। এর মাধ্যমে তিনি সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রতিটি উপজেলায় ভ্রমণ করেছেন।

এই দীর্ঘ ভ্রমণপথে তিনি কখনো বাইক বা প্রাইভেট গাড়ির ওপর নির্ভর করেননি। লোকাল ট্রান্সপোর্ট যেমন অটো, রিকশা, সিএনজি, বাস—এমনকি কখনো হেঁটে চলেই তিনি উপজেলাগুলো ঘুরেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রাতযাপন। যেখানে ভ্রমণকারীদের বেশিরভাগই হোটেলকে ভরসা করেন, সেখানে মাহবুব উর রশিদ হোটেল বর্জন করেছেন এক অনন্য দর্শনে:

“আমি দেখাতে চেয়েছি, হোটেলে এক রাত না থেকেও পুরো বাংলাদেশ ঘোরা সম্ভব।”

তিনি জানান, দেশের প্রতিটি প্রান্তে তিনি এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্যে গিয়েছেন, যারা তাকে শুধু মেহমান নয়, আত্মার আত্মীয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, কখনো মেসে, কখনো কোনো পরিবারের ঘরে—এইভাবেই কেটেছে রাতগুলো। তিনি কখনো জোর করে কারো বাসায় যাননি, বরং আন্তরিক আমন্ত্রণ পেলেই সাড়া দিয়েছেন।

তার ভাষায়,
“ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখা নয়, সম্পর্ক সৃষ্টি করা। যারা ভ্রমণপ্রেমী, শুধু তারাই জানে এর মানে কত গভীর। আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি অন্যের ওপর বাড়তি চাপ না দিতে। খাবারের জন্য হোটেল বেছে নিয়েছি, শুধু ঘুমানোর আশ্রয় চেয়েছি।”

তিনি বলেন, তার প্রতিটি ভ্রমণে ছিল পূর্বপরিকল্পনা। কোনো অঞ্চলে যাবার আগেই জেনে রাখতেন—সেখানে কারা আছেন, যাদের ওপর ভরসা করা যায়। ফলে হোটেলের প্রয়োজন হয়নি। তবে যেসব এলাকায় তিনি একাধিক ব্যক্তিসহ গেছেন, সেখানে হোটেলে থেকেছেন বিবেচনার খাতিরে।

মাহবুব অর রশিদ পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও পাশাপাশি তিনি একজন প্রশিক্ষক, লেখক ও ইউটিউবার। তার ইউটিউব চ্যানেল Mahbub Or Rashid ও ফেসবুক প্রোফাইলে রয়েছে ৬৪ জেলার আলাদা ভ্রমণ ফোল্ডার ও ছবি, যা নতুন ভ্রমণকারীদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে।

এখানেই শেষ নয়। আগামীর পরিকল্পনায় তিনি ঘোষণা দিয়েছেন—২০২৫ সাল থেকেই তিনি আবার বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় যাবেন, এবার বাইকে এবং হোটেলে থেকে। এবারের লক্ষ্য, প্রতিটি উপজেলাকে নিয়ে পৃথক ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা—যাতে স্থানটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাবার ও দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা যায়।

সাথে থাকবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সূচনা, যার প্রথম ধাপ—ভারতের ২৮টি রাজ্য ঘুরে দেখা।

মাহবুব অর রশিদের এই সাধনা, স্বপ্ন ও সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ইচ্ছা, একাগ্রতা ও মানুষের ভালোবাসা থাকলে অসম্ভব বলে কিছুই থাকে না। তিনি শুধু একজন ট্রাভেলার নন, তিনি এক অদম্য যাত্রার নায়ক—বাংলার গর্ব, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি কাটায় মোবাইল কোর্টে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

বাংলার গর্ব: মাহবুব অর রশিদ—৪৯৫ উপজেলা জয় করে গড়লেন ভ্রমণের জীবন্ত ইতিহাস

Update Time : ১১:১৭:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের ভৌগোলিক মানচিত্রের প্রতিটি বিন্দুয়েই যেন তার পদচিহ্ন। দীর্ঘ আট বছর ধরে এক অসম্ভব স্বপ্ন বুকে লালন করে অবশেষে দেশের ৪৯৫টি উপজেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করছেন মাহবুব অর রশিদ—এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়, এক রাতের জন্যও কোনো হোটেলে থাকেননি! মানুষের আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব আর আত্মার সম্পর্কই ছিল তার যাত্রার প্রধান পাথেয়।

২০১৭ সালে অনার্স শেষ করেই সরকারি চাকরিতে যোগ দেন মাহবুব। সেই বছর থেকেই তার ভ্রমণের শুরু। ২০২০ সালের মধ্যে তিনি ৬৪ জেলার সফর শেষ করেন। এরপর শুরু হয় আরও গভীর, আরও বিশাল এক পরিকল্পনা—বাংলাদেশের ৪৯৫টি উপজেলার প্রতিটিতে পা রাখা, সেখানকার প্রকৃতি, জনজীবন, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য উপলব্ধি করা।

২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় পৌঁছানোর মাধ্যমে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করছেন। এটি হবে তার ৪৯৫তম উপজেলা। এর মাধ্যমে তিনি সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রতিটি উপজেলায় ভ্রমণ করেছেন।

এই দীর্ঘ ভ্রমণপথে তিনি কখনো বাইক বা প্রাইভেট গাড়ির ওপর নির্ভর করেননি। লোকাল ট্রান্সপোর্ট যেমন অটো, রিকশা, সিএনজি, বাস—এমনকি কখনো হেঁটে চলেই তিনি উপজেলাগুলো ঘুরেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রাতযাপন। যেখানে ভ্রমণকারীদের বেশিরভাগই হোটেলকে ভরসা করেন, সেখানে মাহবুব উর রশিদ হোটেল বর্জন করেছেন এক অনন্য দর্শনে:

“আমি দেখাতে চেয়েছি, হোটেলে এক রাত না থেকেও পুরো বাংলাদেশ ঘোরা সম্ভব।”

তিনি জানান, দেশের প্রতিটি প্রান্তে তিনি এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্যে গিয়েছেন, যারা তাকে শুধু মেহমান নয়, আত্মার আত্মীয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, কখনো মেসে, কখনো কোনো পরিবারের ঘরে—এইভাবেই কেটেছে রাতগুলো। তিনি কখনো জোর করে কারো বাসায় যাননি, বরং আন্তরিক আমন্ত্রণ পেলেই সাড়া দিয়েছেন।

তার ভাষায়,
“ভ্রমণ শুধু জায়গা দেখা নয়, সম্পর্ক সৃষ্টি করা। যারা ভ্রমণপ্রেমী, শুধু তারাই জানে এর মানে কত গভীর। আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি অন্যের ওপর বাড়তি চাপ না দিতে। খাবারের জন্য হোটেল বেছে নিয়েছি, শুধু ঘুমানোর আশ্রয় চেয়েছি।”

তিনি বলেন, তার প্রতিটি ভ্রমণে ছিল পূর্বপরিকল্পনা। কোনো অঞ্চলে যাবার আগেই জেনে রাখতেন—সেখানে কারা আছেন, যাদের ওপর ভরসা করা যায়। ফলে হোটেলের প্রয়োজন হয়নি। তবে যেসব এলাকায় তিনি একাধিক ব্যক্তিসহ গেছেন, সেখানে হোটেলে থেকেছেন বিবেচনার খাতিরে।

মাহবুব অর রশিদ পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও পাশাপাশি তিনি একজন প্রশিক্ষক, লেখক ও ইউটিউবার। তার ইউটিউব চ্যানেল Mahbub Or Rashid ও ফেসবুক প্রোফাইলে রয়েছে ৬৪ জেলার আলাদা ভ্রমণ ফোল্ডার ও ছবি, যা নতুন ভ্রমণকারীদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে।

এখানেই শেষ নয়। আগামীর পরিকল্পনায় তিনি ঘোষণা দিয়েছেন—২০২৫ সাল থেকেই তিনি আবার বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় যাবেন, এবার বাইকে এবং হোটেলে থেকে। এবারের লক্ষ্য, প্রতিটি উপজেলাকে নিয়ে পৃথক ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা—যাতে স্থানটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাবার ও দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা যায়।

সাথে থাকবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সূচনা, যার প্রথম ধাপ—ভারতের ২৮টি রাজ্য ঘুরে দেখা।

মাহবুব অর রশিদের এই সাধনা, স্বপ্ন ও সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ইচ্ছা, একাগ্রতা ও মানুষের ভালোবাসা থাকলে অসম্ভব বলে কিছুই থাকে না। তিনি শুধু একজন ট্রাভেলার নন, তিনি এক অদম্য যাত্রার নায়ক—বাংলার গর্ব, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।

Facebook Comments Box