ঢাকা , রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শাহরাস্তিতে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিশাল ইফতার মাহফিল, শত শত নেতাকর্মীর ঢল শাহরাস্তিতে সাগরিকা এক্সপ্রেসের নিচে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের করুণ মৃত্যু শাহরাস্তি  টামটা  উত্তর ইউপি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মতনিময় সভা শেষে ইফতার ও দোয়ার মাহফিল  রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নে বিএনপির মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত শ্রীপুরে দু’শজনের হাতে ঈদ উপহার তুলে দিলেন জেলা জামায়াতের আমীর ড.মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শাহরাস্তি আলো ফাউন্ডেশনের নবগঠিত কমিটির আত্মপ্রকাশ, ইফতার মাহফিলে একত্রিত সমাজসেবীরা ঐতিহ্যের দ্বারপ্রান্তে ধ্বংস! বড় শরীফপুরের প্রাচীন মসজিদ হারাচ্ছে অস্তিত্ব শাহরাস্তিতে রোমহর্ষক হত্যা: জবানবন্দিতে সোনিয়া ও পান্নার স্বীকারোক্তি, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ সৌদি আরবে চাঁদপুর জেলা বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল: খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য বিশেষ মোনাজাত লক্ষ্মীপুরের তোফাজ্জল হোসেন নিখোঁজ

শাহরাস্তিতে রোমহর্ষক হত্যা: জবানবন্দিতে সোনিয়া ও পান্নার স্বীকারোক্তি, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। গত ১৭ মার্চ রাতে ৩ সন্তানের জনক আলমগীর হোসেনকে (৩৮) নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ তদন্তে নেমে পাশের বাড়ির বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার সোনিয়া (৩০) ও তার মা খোদেজা বেগম পান্নাকে (৫০) আটক করে। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর শাহরাস্তি মডেল থানা, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট তদন্ত শুরু করে। সৌদি প্রবাসী আবুল হোসেন মানিকের মালিকানাধীন বাড়ির ছাদ থেকে আলমগীরের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহভাজন হিসেবে ওই বাড়ির বাসিন্দা সোনিয়া ও তার মা পান্নাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে একপর্যায়ে স্বীকার করে যে, পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যার ঘটনায় নিহত আলমগীরের বড় ভাই মো. রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৮ মার্চ শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চারজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে বিবাদী করা হয়। মামলাটি ধারা ৩০২/৩৪ অনুযায়ী পরিকল্পিত হত্যা ও একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। মামলার নম্বর ১৫, তারিখ ১৮/৩/২৫।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন—মনিপুর গ্রামের মাহমুদা আক্তার সোনিয়া (৩০), তার বাবা সৌদি প্রবাসী আবুল হোসেন মানিক, সোনিয়ার মা খোদেজা বেগম পান্না (৫০) এবং খিতারপাড় গ্রামের তাজুল ইসলাম তপন (৪৩)।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা দ্রুত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাসার জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সোনিয়া ও তার মা পান্নাকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সোনিয়া ও পান্না স্বীকার করেছেন যে, তারা পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করেছেন। তাদের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে আরও কিছু ব্যক্তির সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে, যাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পুলিশ দ্রুতই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনায় জানা যায়, ১৭ মার্চ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে স্থানীয়রা আবুল হোসেন মানিকের বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে সন্দেহজনক শব্দ শুনতে পান। পরে তারা ছাদে গিয়ে আলমগীরের গলাকাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এলাকাবাসীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেয়।

নিহত আলমগীর হোসেন (৩৮) পেশায় একজন শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন। তিনি এলাকায় মাইকিং, গাছ কাটার কাজ করতেন এবং ভটভটি (নসিমন) চালাতেন। তার পিতা মৃত মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ। আলমগীরের সংসারে স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে, যারা তাকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ ছিল, তা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, এবং শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, আলমগীরের সঙ্গে সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এবং এ সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে টাকা-পয়সার লেনদেন কিংবা অন্য কোনো ষড়যন্ত্র এর পেছনে রয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখছে স্থানীয় পুলিশ।

এ ঘটনায় পুরো শাহরাস্তি জুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর একটাই দাবি—যাতে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিশাল ইফতার মাহফিল, শত শত নেতাকর্মীর ঢল

শাহরাস্তিতে রোমহর্ষক হত্যা: জবানবন্দিতে সোনিয়া ও পান্নার স্বীকারোক্তি, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর পুলিশ

Update Time : ০৩:৪৬:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। গত ১৭ মার্চ রাতে ৩ সন্তানের জনক আলমগীর হোসেনকে (৩৮) নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ তদন্তে নেমে পাশের বাড়ির বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার সোনিয়া (৩০) ও তার মা খোদেজা বেগম পান্নাকে (৫০) আটক করে। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর শাহরাস্তি মডেল থানা, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট তদন্ত শুরু করে। সৌদি প্রবাসী আবুল হোসেন মানিকের মালিকানাধীন বাড়ির ছাদ থেকে আলমগীরের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহভাজন হিসেবে ওই বাড়ির বাসিন্দা সোনিয়া ও তার মা পান্নাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে একপর্যায়ে স্বীকার করে যে, পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যার ঘটনায় নিহত আলমগীরের বড় ভাই মো. রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৮ মার্চ শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চারজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে বিবাদী করা হয়। মামলাটি ধারা ৩০২/৩৪ অনুযায়ী পরিকল্পিত হত্যা ও একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। মামলার নম্বর ১৫, তারিখ ১৮/৩/২৫।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন—মনিপুর গ্রামের মাহমুদা আক্তার সোনিয়া (৩০), তার বাবা সৌদি প্রবাসী আবুল হোসেন মানিক, সোনিয়ার মা খোদেজা বেগম পান্না (৫০) এবং খিতারপাড় গ্রামের তাজুল ইসলাম তপন (৪৩)।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা দ্রুত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাসার জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সোনিয়া ও তার মা পান্নাকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সোনিয়া ও পান্না স্বীকার করেছেন যে, তারা পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করেছেন। তাদের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে আরও কিছু ব্যক্তির সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে, যাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পুলিশ দ্রুতই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনায় জানা যায়, ১৭ মার্চ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে স্থানীয়রা আবুল হোসেন মানিকের বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে সন্দেহজনক শব্দ শুনতে পান। পরে তারা ছাদে গিয়ে আলমগীরের গলাকাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। এলাকাবাসীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেয়।

নিহত আলমগীর হোসেন (৩৮) পেশায় একজন শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন। তিনি এলাকায় মাইকিং, গাছ কাটার কাজ করতেন এবং ভটভটি (নসিমন) চালাতেন। তার পিতা মৃত মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ। আলমগীরের সংসারে স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে, যারা তাকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ ছিল, তা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। তবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, এবং শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, আলমগীরের সঙ্গে সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এবং এ সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে টাকা-পয়সার লেনদেন কিংবা অন্য কোনো ষড়যন্ত্র এর পেছনে রয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখছে স্থানীয় পুলিশ।

এ ঘটনায় পুরো শাহরাস্তি জুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর একটাই দাবি—যাতে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে।

Facebook Comments Box