
শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বড় শরীফপুর মসজিদ আজ অযত্ন আর অবহেলার শিকার। প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত হলেও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে মসজিদটি।
জানা যায়, বড় শরীফপুর মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৯৪ মিটার। এর তিনটি গম্বুজে রয়েছে পদ্মফুলের নকশা। সামনের দেওয়ালে ফার্সি ভাষায় একটি শিলালিপি রয়েছে, যা পুরোপুরি বোঝা না গেলেও স্থানীয়দের মতে, মসজিদটি ১৬২০-১৬২৫ সালের মধ্যে নির্মিত হয়।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, হায়াতে আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন এলাকার কোতোয়াল, তাই মসজিদটি “কোতোয়ালি মসজিদ” নামেও পরিচিত। তবে তাঁর পরিচয় নিয়ে দুটি মত রয়েছে—একটি মতে, তিনি নাটেশ্বর নামের এক রাজার কর্মকর্তা ছিলেন, অন্য মতে, তিনি দরবেশ সৈয়দ শাহ শরীফ বাগদাদির মুরিদ ছিলেন।
মসজিদের পাশেই রয়েছে বিশাল নাটেশ্বর দীঘি, যা একই সময়ের সাক্ষী। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, নাটেশ্বর রাজা এটি খনন করেছিলেন। দীঘির পাড়ে অবস্থিত মাজার শরীফও মানুষের কাছে বিশেষ ভক্তির স্থান।
মসজিদটি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার ও উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একদিকে ডাকাতিয়া নদী, অন্যদিকে নরহ খাল এবং মনোহরগঞ্জ-হাসনাবাদ সড়কের সন্নিকটে এর অবস্থান। মসজিদ, দীঘি ও মাজারকে ঘিরে এখানে একটি প্রত্ন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
বড় শরীফপুর মসজিদ ১৯৫৯ সালে সংরক্ষিত স্থাপনার স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৬০-এর দশকে প্রথমবার সংস্কার করা হয়। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আরও সংস্কার করে। তবে বর্তমানে এটি অযত্নের শিকার, আস্তর খসে পড়ছে, স্থাপনার সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী বলেন, “এটি শুধু একটি উপাসনালয় নয়, বরং আমাদের ইতিহাসের অংশ। চার শতাধিক মুসল্লি এখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। দ্রুত সংস্কার করা না হলে, এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে চিরতরে।”
ইতিহাসের সাক্ষী এই স্থাপনাটিকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত সংরক্ষণ কার্যক্রম চালানো গেলে এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
এখনই যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো একদিন ইতিহাসের পাতায় শুধু লেখা থাকবে—এখানে একসময় দাঁড়িয়ে ছিল এক অনন্য স্থাপত্য!