
শাহরাস্তির বেরনাইয়া বাজারে মরা গরুর মাংস বিক্রির ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে এক ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে আটক করে এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এই ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫, সকালে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ, মেম্বার, মহিলা মেম্বার এবং বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ মরা গরুর মাংস বিক্রির বিষয়টি প্রথমে শনাক্ত করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে দ্রুত সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার এর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাংস বিক্রেতা মোঃ হেলাল উদ্দিন (২৮), পিতা আব্দুল লতিফ, সাং মির্জাপুর-কে হাতেনাতে আটক করা হয়। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয়দের দাবি।
অভিযানের সময় বাজার কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সেলিম মিয়াজী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহাগ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি করেন। মোবাইল কোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে হেলালকে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা করে এবং উদ্ধারকৃত মরা গরুর মাংস ধ্বংস করা হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান, এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সহায়তায় ওই মাংস মাটিচাপা দেওয়া হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মরা গরুর মাংস বিক্রি করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য বিক্রি করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হতে পারে। একইভাবে পশু জবাই ও মাংস পরীক্ষা আইন, ২০১১ অনুযায়ী, অসুস্থ বা মৃত পশুর মাংস বিক্রি করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। প্রশাসন সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ধরা পড়লে শাস্তির মাত্রা আরও কঠোর হবে।
এই ঘটনার পর বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এর আগেও গোপনে মরা গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধীরা উৎসাহিত হয়েছে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে যদি প্রকাশ্যে মরা গরুর মাংস বিক্রি হয়, তাহলে আমরা কী খাচ্ছি? প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
অভিযানে প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার, উপজেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মাকসুদুর রহমান এবং শাহরাস্তি থানা পুলিশের এসআই আনোয়ার হোসেন ও তার সঙ্গী ফোর্স। প্রশাসন বাজারের সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যদি কোথাও সন্দেহজনক কোনো খাদ্যপণ্য বিক্রি হতে দেখেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে হবে।
এ ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের ক্রেতারা এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন, কারণ তারা জানেন না আগে এমন মাংস তারা খেয়েছেন কি না! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মরা গরুর মাংস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এটি খেলে ফুড পয়জনিং, সংক্রমণ এমনকি দীর্ঘমেয়াদি রোগ হতে পারে। প্রশাসন জানিয়েছে, বাজারে নিয়মিত অভিযান চলবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই ঘটনা প্রমাণ করেছে, অপরাধীরা যতই গোপনে কাজ করুক, প্রশাসনের কঠোর নজরদারির বাইরে কিছুই নয়! শাহরাস্তিতে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য কাজ করতে সাহস না পায়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এ ধরনের ভয়াবহ অপরাধ রুখতে!