চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ইঞ্জি. এ বি এম পলাশের পিতা মোঃ নুরুল ইসলাম, ছেলের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বিগত সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তিনি পান নি। মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণে রাজনৈতিক পদ ও পদবী বিবেচনার বিষয়টি সত্যিই মর্মান্তিক৷
দেশ স্বাধীনের মহান নেশায় মত্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভাতা প্রদান ও মূল্যায়ন করার বিষয়টি এখন উপজেলা জুড়ে আলোচনায় তুঙ্গে।
উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ইঞ্জি. এ বি এম পলাশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে আক্ষেপ নিয়ে লিখেন, তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও আজ নিজের বিবেকের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে আছেন, মৃত বাবার আত্মার নিকট কি জবাব দিবেন, বুঝতে পারছেন না!
তার রাজনীতির বলির পাঠা তার নিজের পরিবার আর তার বাবা! যিনি স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই আনসার বাহিনীতে ১৯৬৬-১৯৬৮ সালে ট্রেইনিং কোর্স সম্পূর্ন করেন, পরবর্তীতে ট্রেইনার হিসেবে ১৯৬৯ সালে কাজ করেন।
পরবর্তীতে তার বাবা নিজের পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা না করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন হাতিমারা ক্যাম্প থেকে। বাবার নিকট তিনি সবসময় মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবার ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন কুমিল্লার আফজাল খান, শাহরাস্তির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রুহুল আমিন ও ইউনিয়ন কমান্ডার মোঃ আবু তাহের।
সহকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফাই করে দেওয়ার পর ২০০৪ সালে তার বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, কিন্তু তৎকালীন সরকার আসার পর সকল কিছু বাতিল করে দেয়, আবার ২০১৭ সালে সকল প্রকার কাগজ পত্র জমা দিলেও এক অজানা কারণ ও শক্তির নিকট একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে পরাজিত হতে হয়।
বঞ্চিত করা হলো তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের প্রাপ্য অধিকার। একটা দেশের রাজনীতি কতটা নোংরা হলে একটা স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা কতটা অসহায় হয়ে পড়ে। তার বাবার মৃত্যুর পূর্বে বয়সকালে চেহারা দেখে তিনি বুঝতে পারতেন, তার বাবার মনের অজানা কষ্ট!
মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম তার জীবনদশায় শুধু বলতো- কেন তুই (এবিএম পলাশ) ছাত্রদলের রাজনীতি করোস? তোর কারণে আজকে আমি সকল কিছু থেকে বঞ্চিত!
ছাত্রদল নেতা এবিএম পলাশ আক্ষেপ করে আরও লিখেন, ছাত্রদলের রাজনীতি করাটা এতোটা অপরাধ আর অভিশাপ হবে তা বুঝতে পারি নাই। নিজের চাকুরী থেকে শুরু করে সকল কিছু হারিয়েছি শুধু একটা সংগঠনকে ভালোবেসে। ভাতা বড় কথা নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মৃত্যুর পরেও তার বাবা পায়নি ওনার প্রাপ্য সম্মান,শুধু একটা কাগজের সার্টিফিকেটের কারণে।
কোন একটা কারনে সকল কাগজ পত্রগুলো আবার চোখের সামনে পড়লো, সারা রাত নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে আর বার বার বাবার কথা মনে হচ্ছে, চিৎকার করে কাঁদতে হলো অনেক। মনে হচ্ছে বাবা, বড্ড অপরাধী ছেলে আমি!!
যদি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতাম তাহলে বাবার সকল কিছু পান্তা ভাতের মতো সহজে হয়ে যেতে। তখন সবার চেতনা জাগ্রত হতো, এই দেশ যাঁরা স্বাধীন করেছে এখনো তাদের সঠিক ভাবে মূল্যায়ন হয়নি। হয়েছে শুধু একটা গোষ্ঠীর, যাঁরা কখনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তাঁরা আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা!! অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। আর আড়ালে রয়ে গেলো এই রকম নাম না জানা অনেক হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
একটা মানুষের সকল প্রকার ডকুমেন্ট থাকার পর ও ওনি বঞ্চিত হয়েছেন কেন??এর জবাব কে দিবে??
তিনি তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও সনদ দিয়ে জাতিকে কলংক মুক্ত করার কথা বলেছেন। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট বাতিল করে তাদের সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে এবং শাস্তির আওতায় আনারও জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষে তার বাবাসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা মৃত্যু বরন করেছেন তাদের রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।