ওমানে অগ্নিকান্ডে নিহত চাঁদপুরের শাহরাস্তির হোসেন মিয়াজীর (২২) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র পুত্র সন্তান ও পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎসকে হারিয়ে নির্বাক পিতা আব্দুস সালাম (৭০)। মা নুরজাহানের গগণ বিদারি চিৎকারে ভারি আশপাশের পরিবেশ।
নিহত হোসেন মিয়াজী ওমানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর বুরাইমির একটি সোফা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার (১১ মার্চ) ভোর রাতে ওই কারখানায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকান্ডে নিহতদের একজন তিনি।
হোসেন মিয়াজী চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের নিজমেহার গ্রামের যুগী বাড়ির আব্দুস সালামের একমাত্র পুত্র। পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে বিদেশ পাঠানো হয় তাকে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঋণের দায় কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবারটি। এমন পরিস্থিতিতে পুত্রের মৃত্যুতে ঋণের দায় ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই পরিবারের উপর।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেলে হোসেন মিয়াজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের মা ও বোনেরা আহাজারি করছেন। বাবা আব্দুস সালাম নির্বাক। হোসেন নিহত হওয়ার খবরে তার বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, হোসেনের বাবা আব্দুস সালাম এক সময় রিক্সা চালাতেন। বর্তমানে বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত তিনি। পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় ২০১৯ সালে হোসেন ওমান যান। করোনা কালীন বেকারত্ব ও কাগজপত্র বৈধ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত এখন পর্যন্ত তাদের ৮ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে।
হোসেনের ছোট বোন মরিয়ম আক্তার জানান, নিজের ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শ্বশুর বাড়ি এলাকার এনজিও থেকে ঋণ এনে দিয়েছেন। একটি দুর্ঘটনা তাদের সবাইকে পথে বসিয়ে দিলো।
হোসেনের মা নুরজাহান বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, বেশি লাভের আশায় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি, আজ আমার সব শেষ। সরকার যেন আমার ছেলের লাশ দেশে এনে দেন, শেষবারের মতো দেখতে দেন।
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মিজানুর রহমান জানান, এ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হোসেন অত্যন্ত বিনয়ী ও কর্মঠ ছিলো। তার লাশ দেশে আনতে পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।