ঢাকা , রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শাহরাস্তি পৌরসভা ছাত্রদলের উদ্যোগে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত ইউ.এস যুব সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ও নতুন কমিটি গঠন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা লক্ষীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের উদ্যোগে রাস্তা মেরামতের কাজ উদ্বোধন শাহরাস্তিতে খামপাড় ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত আমি আপনাদের নিজের লোক ~আলহাজ্ব মোঃ ফারুক হোসেন মিয়াজি শাহরাস্তিতে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন বিএনপি নেতা ব্যারিষ্টার মোঃ কামাল উদ্দিন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা লক্ষীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের উদ্যোগে রাস্তা মেরামতের কাজ উদ্বোধন দুদকের আয়োজনে দুপ্রকে’র বাস্তবায়নে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ শাহরাস্তিতে শাযুকস কর্তৃক ইসলামি ছাত্র ও যুব কল্যাণ পাঠাগার পুনঃস্থাপন  শাহরাস্তি পৌর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

অন্যরকম এক বিদায় সংবর্ধনা পেল শিক্ষক বেগম রাবেয়া

রুহুল আমিন খাঁন স্বপনঃ দীর্ঘ ৩২ বছরেরও বেশী সময় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫৫নং কাঁশারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বেগম রাবেয়া। রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) ছিল তার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবস। এদিন প্রিয় শিক্ষককে অবসর জনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

১৯৯০ সালের ২২ মে নিজের শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন বেগম রাবেয়া। শুরুতে অন্য একটি বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও এর পরের বছরই বদলি হয়ে আসেন কাঁশারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় ৩৩ বছর। শুরুর দিক থেকেই গণিত বিষয়ে পাঠদান করতেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছে তার পরিচয় ছিল ‘অঙ্কের স্যার’ হিসেবেই।

শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সহকর্মীদের পাশাপাশি উপস্থিত হন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষককে অশ্রুসজল নয়নে বিদায় দেন তারা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।

পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিদায়ী শিক্ষককের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করা হয়। তার হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মানসূচক ক্রেস্ট। শিক্ষার্থীরা বিদায়ী গানের মাধ্যমে প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করেন। শিক্ষাগুরুকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেন তার শিষ্যরা।

অনুষ্ঠানে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, যেকোনো বিদায় বেদনার, কষ্টের। বেগম রাবেয়া ম্যাডামের মতো শিক্ষক এদেশের সম্পদ, তারাই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। তার অনুপস্থিতিতে এ বিদ্যালয় তার শুন্যতা অনুভব করবে। সবকিছুরই শেষ আছে, না চাইলেও একদিন ঠিকই বিদায় বলতে হয়। আমি তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আর এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

সহকারী শিক্ষা অফিসার অলি উল্লাহ বলেন, বেগম রাবেয়া তার কর্মজীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের কল্যাণে অনেক বড় বড় জায়গা থেকে ভূমিকা রাখছেন। তিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। আমি তার নতুন যাত্রার শুভকামনা করছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গুলশান আক্তার বলেন, আজ সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার দিন, মন খারাপের দিন। রাবেয়া ম্যামকে আর কোনোদিন ক্লাসে পাব না ভাবতেই খারাপ লাগছে। সহকর্মী হিসেবে তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা,সততা ও সময়ানুবর্তিতা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ৩৪টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তিনি নিজে তৈরি করেছেন যাদের অনেকে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজ সন্তানদেরকে যেভাবে মানুষ করেছেন, তেমনি করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তিনি যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইলিয়াস আহমেদ, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর তারেক নাথ মল্লিক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ফরিদগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন কবির, মহিলা সম্পাদিকা হাসিনা আক্তার, বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তি পৌরসভা ছাত্রদলের উদ্যোগে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত

অন্যরকম এক বিদায় সংবর্ধনা পেল শিক্ষক বেগম রাবেয়া

Update Time : ০২:৩০:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪

রুহুল আমিন খাঁন স্বপনঃ দীর্ঘ ৩২ বছরেরও বেশী সময় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫৫নং কাঁশারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বেগম রাবেয়া। রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) ছিল তার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবস। এদিন প্রিয় শিক্ষককে অবসর জনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

১৯৯০ সালের ২২ মে নিজের শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন বেগম রাবেয়া। শুরুতে অন্য একটি বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও এর পরের বছরই বদলি হয়ে আসেন কাঁশারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় ৩৩ বছর। শুরুর দিক থেকেই গণিত বিষয়ে পাঠদান করতেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছে তার পরিচয় ছিল ‘অঙ্কের স্যার’ হিসেবেই।

শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সহকর্মীদের পাশাপাশি উপস্থিত হন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষককে অশ্রুসজল নয়নে বিদায় দেন তারা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।

পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিদায়ী শিক্ষককের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করা হয়। তার হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মানসূচক ক্রেস্ট। শিক্ষার্থীরা বিদায়ী গানের মাধ্যমে প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করেন। শিক্ষাগুরুকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেন তার শিষ্যরা।

অনুষ্ঠানে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, যেকোনো বিদায় বেদনার, কষ্টের। বেগম রাবেয়া ম্যাডামের মতো শিক্ষক এদেশের সম্পদ, তারাই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। তার অনুপস্থিতিতে এ বিদ্যালয় তার শুন্যতা অনুভব করবে। সবকিছুরই শেষ আছে, না চাইলেও একদিন ঠিকই বিদায় বলতে হয়। আমি তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আর এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

সহকারী শিক্ষা অফিসার অলি উল্লাহ বলেন, বেগম রাবেয়া তার কর্মজীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়িয়েছেন, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের কল্যাণে অনেক বড় বড় জায়গা থেকে ভূমিকা রাখছেন। তিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের কাজের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন। আমি তার নতুন যাত্রার শুভকামনা করছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গুলশান আক্তার বলেন, আজ সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার দিন, মন খারাপের দিন। রাবেয়া ম্যামকে আর কোনোদিন ক্লাসে পাব না ভাবতেই খারাপ লাগছে। সহকর্মী হিসেবে তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা,সততা ও সময়ানুবর্তিতা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ৩৪টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তিনি নিজে তৈরি করেছেন যাদের অনেকে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজ সন্তানদেরকে যেভাবে মানুষ করেছেন, তেমনি করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তিনি যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইলিয়াস আহমেদ, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর তারেক নাথ মল্লিক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ফরিদগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন কবির, মহিলা সম্পাদিকা হাসিনা আক্তার, বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ।

Facebook Comments Box