এবারের আগরতলা সফরের মুল উদ্দেশ্য ছিলো দুটো। একটি “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া আর একটি হলো ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান দেখা। এটা ভারতের দক্ষিন ত্রিপুরার চোত্তাখোলা, বেলুনিয়া এলাকায়।
এখান থেকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধারা চট্রগ্রাম,বৃহত্তর নোয়াখালী, বৃহত্তর কুমিল্লা এলাকা নিয়ন্ত্রন করতেন। এখানের আশেপাশে বহু মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরন করেন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষা করা এবং ভারত সরকার যুদ্ধে সহায়তা এবং সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন সে স্মৃতি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান করা হয়। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সব কিছুই তুলে ধরা হয়েছে।
২০-০২-২৩ তারিখ সকাল ৮ টায় ঢাকা থেকে বাস যোগে আগার তলায় রওয়ানা দিই। আগরতলায় পৌঁছার কথা ছিলো ২টার মধ্যে, বর্ডারে দেরী হওয়ায় বিকাল ৪টায় পৌছেছি। ২ টা থেকে চুনি’দা এবং সুমন’দা বাস কাউন্টারে আমার জন্য অপেক্ষা করে আমাকে নিয়ে হোটেলে গেলেন। রাত্রি ১১টা পর্যন্ত চুনি’দা ওনার জীবনে গল্প শুনিয়ে বাসায় গেলেন। ওনার বাড়ি ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আমার দীর্ঘদিনের সিনিয়র বন্ধু চুনিলাল দেবনাথ। তিনি কবি, সাহিত্যক, ছড়াকার, রাজনীতিবিদ, সর্বত্র ওনার বিচরন। উনি ওখানকার নেতাদের নেতা। বয়স বর্তমানে ৮০বছরের উপরে। এখনো ভেছফা চালিয়ে চলাফেরা করেন। আর জুনিয়র বন্ধু সুমন দা, ঈশ্বর পাঠশালা স্কুলের পরিচালক,বাড়ি ছিলো সীতার কুন্ড । দুজনে ই আমার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ এবং আমার সাথে থেকেছেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকালে চুনি দা এসে আমাকে নাস্তা করালেন। সুমন দা সহ অনুষ্ঠান দেখার জন্য “প্রথমে জনজাগরন মঞ্চ আগরতলার অনুষ্ঠানে যাই। ওখান কার সবাই আমাকে আপন করে নিলেন। কিছু বলার অনুরোধ করলেন,বললাম।
সেখান থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের অনুষ্ঠানে গিয়ে কিছুক্ষন থেকে পূর্ব নির্ধারিত “ঈশ্বর পাঠশালা স্কুলে” যাই। সেখানে প্রধান শিক্ষকের রুমে বসে চা নাস্তা খেয়ে চুনি দা সহ অনুষ্ঠানের হল রুমে গিয়ে দেখি ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার আগর তলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ বসে আছে,আমাকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে ঘোষনা দিলো। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম বড় বড় মানুষের উপস্থিতির মধ্যে আমি প্রধান অতিথি। আমাকে এ সম্মান দেওয়ায় আমি উপস্থিত অতথিবৃন্দ,ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ, স্কুল পরিচালনা কমিটি, প্রধান শিক্ষক সহ সকল ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবকবৃন্দকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।ওরা বিদেশীদেরকে কি ভাবে সম্মান দিতে হয় তারা তা জানে। ঐ দেশে বিশেষ বিশেষ দিনে স্কুলের ছেলে মেয়েদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্যাংক কর্তৃক পুরস্কৃত করা হয়। বিদেশের মাটিতে এ সম্মান আমি আজীবন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করবো।
অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যায় ভারত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান দেখে হোটেলে চলে যাই। পরের দিন সকালে সুমন দা সহ ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানে রওয়ানা দিলাম ২০০ থেকে ২৫০ কিমি পথ। অসাধারন ভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
চোত্তাখোলা, বেলুনিয়া এলাকায় সুমন দার মামার বাড়িতে দুপুরের খাবারের দাওয়াত ছিলো। সব দেখে, সুমন দার মামার বাড়ি যাই। সেখানে গিয়ে লোকজন দেখে আমার ছোটো বেলার মামার বাড়ির কথা মনে পড়ে গেলো, মনে হচ্ছে আমার বড় খালা এবং নানী বসে আছেন। ওনারা আমাকে ৬৭-৬৮ সালের দিকে আমার খালা নানী ও ভাবী যে ভাবে আদর আপ্যায়ন করতেন ঠিক সে ভাবে আদর আপ্যায়ন শুরু করলেন।
বিদ্যুৎ না থাকায়, উঠানে বসে খাওয়া দাওয়া করলাম। সে পুরনো দিনের মা খালাদের মজার রান্না বহু বছর পর খেলাম।খাওয়া শেষ করে জানতে পারলাম। সুমন দার মামীর বোন শিলিগুড়ি থেকে বেড়াতে এসেছেন। আমি ওনার সাথে গল্প করে জানলাম উনি আমাদের অফিসের পরশ বাবুর আপন বড় ভাবী। পরশ বাবুকে টেলিফোন করে যোগাযোগ করে দিলাম।
মামির বাড়ী মিরেরশরাই,মামার বাড়ি ফেনী ছিলো।সবাইকে অসম্ভব ভালো লেগেছিলো।
আমার আরো ২/১দিন থাকার ইচ্ছে ছিলো কিন্ত বেলুনিয়া যাওয়া আশা করায় শরীরটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো। অন্যান্য দিনের মত চুনি দা আমাকে একটা হোটেলে সকাল বেলা নাস্তা করাতে নিলেন। নাস্তা খাওয়ার সময় চুনি দা কে বললাম শরীর ভালো লাগতেছে না চলে যাবো। দাদা ও রাজী হলেন সুমন বাবুকে টেলিফোন করে জানালাম চলে যাবো। তখন সুমন দা, চুনি দা বর্ডারের দিকে রওয়ানা হলেন পথে বিগ বাজার থেকে চুনি দা রেবেকার জন্য একটা দামী চাদর উপহার হিসাবে দিলেন। বিগ বাজার থেকে আমি কিছু মশলা কিনলাম তখন জানলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ছাড় দিয়েছে। ঐ মূহুর্তে ভাবলাম কারা রক্ত দিলো আর ছাড় দে কারা?
চুনি দা এ বয়সে আমাকে যে সময় দিয়েছেন তা আমি আজীবন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন রাখবো। ওনার শরীর টা ভালো মনে হলো না। বাংলাদেশে বেড়ানোর জন্য বার বার অনুরোধ করেছি। চুনি দা, সুমন দা আমার জন্য যা করেছেন এবং যাদের সাথে নতুন ভাবে যোগাযোগ হলো তাদেরকে,বিশেষ করে জনজাগরন মঞ্চের আয়োজক বৃন্দ, ঈশ্বর পাঠশালা স্কুলের কমিটি,প্রধান শিক্ষিকা,শিক্ষকবৃন্দ,ছাত্র ছাত্রী এবং আগরতলাবাসীকে বাংলাদেশের রক্তিম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা দিয়ে শেষ করছি।