চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর। দীর্ঘ ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কমিটি গঠন করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি জেলা ছাত্রলীগ। ফলে নেতৃত্বহীন হয়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ও বেহাল হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি। বর্তমানে শুধু ব্যানার-ফেস্টুনেই টিকে আছে শাহরাস্তি ছাত্রলীগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব একাধিক ছাত্রলীগ পদ প্রত্যাশীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজির থাকলেও বাস্তবিক অর্থে তারা মাঠে অনেকেই নেই।
কমিটি গঠন না করায় নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি এর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। এরই মধ্যে কমিটিতে পদপ্রত্যাশী অনেক ছাত্রনেতা রাজনীতি থেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সাংসারিক জীবনেও প্রবেশ করেছেন এবং কর্মের জন্য বিদেশেও চলে গিয়েছে। আর যে কয়েকজন এখনও সক্রিয় রয়েছেন, তারাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কমিটি না থাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সম্মেলনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের অর্ধশতাধিক সিভি জমা পড়লেও বর্তমানে হাতেগোনা অল্প কয়েকজন এখন পর্যন্ত সেই দৌড়ে টিকে আছেন।
অন্যদিকে শাহরাস্তিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও কলেজের অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বেশ সচল রয়েছে। ইতোমধ্যে ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনও ভালোভাবেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে কমিটি না থাকায় শাহরাস্তি ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্যানেলের কর্মী নিজেদের পদধারী সাবেক নেতা দাবি করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় মাঝেমধ্যেই বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছেন। যার ফলে ঐতিহ্যবাহী গৌরবময় ইতিহাসের এই ছাত্র সংগঠনটির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, সম্মেলনের ৮ মাস শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে উপজেলাটি অভিভাবকহীন অবস্থায় আছে। শাহরাস্তিতে সবচেয়ে সক্রিয় এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মতো সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কমিটি হোক এবং আমাদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যক্রম পূর্বের মতো সচল হোক। তাই জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখে অবিলম্বে কমিটি ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন নেতৃত্বহীন অবস্থায় থাকায় ছাত্রলীগের উপজেলায় অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী ছিল। বর্তমানে হাতে গোনা অল্প কয়েকজন মাঠে আছেন। বাকিরা রাজনীতি ছেড়ে নিজেদের মতো আছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নিষ্ঠার সাথে রাজনীতি করে আসছে, ছাত্রলীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আসছে, কমিটি না দিয়ে তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।
সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মিন্টু বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে অভিভাবকহীন অবস্থায় চলমান সংকটের ফলে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব সংকটে পড়বে উপজেলা ছাত্রলীগ। উপজেলায় কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পূর্বেও শাহরাস্তি উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্বের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি কখনও দিতে পারে নি। এমনকি বিভিন্ন ইউনিয়ন ও কলেজগুলোতেও কমিটি ঠিক মতো দিতে পারে নি। তাই বর্তমানে নেতৃত্ব সংকট ও অচলাবস্থার জন্য দায়ী সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও।