ঢাকা , রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শাহরাস্তিতে কালীবাড়ি বাজার ব্যবসায়ী তারেকুল ইসলাম পাটোয়ারীর পিতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন শাহরাস্তিতে মসজিদের সামনে থেকে মুসল্লির অটোরিক্সা চুরি শাহরাস্তিতে বাজার পরিদর্শনে পৌর প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান শাহরাস্তিতে সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি’র উদ্যোগে বন্যাদূর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত শাহরাস্তিতে প্রত্যন্ত এলাকায় বন্যাদূর্গতদের মাঝে ছাত্রদলের ত্রাণ বিতরণ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির বহু অভিযোগ শাহরাস্তিতে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ জামায়াতে ইসলামী ক্রীড়া সংগঠক ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেটার সাদ্দাম হোসেন মিঠু’র মাধ্যমে উজ্জ্বল হচ্ছে শাহরাস্তির ক্রীড়াঙ্গন শাহরাস্তিতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্য আমন ধানের উফশী জাতের বীজ ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ

শাহরাস্তিতে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধে বিধবা মাতার সংগ্রাম

৫ বছর খাঁচায় বন্দি প্রতিবন্ধী ফাহাদ, স্বামী সন্তান হারিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন মা নাছিমা বেগম

২৩ বছর বয়সী জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী আঃ আজিজ ফাহাদ পিতা মাতার আদরের বড় সন্তান। হাঁটা চলা সহ কথাও বলতে পারেনা সে। ছোটথেকে বড় হওয়ার পর হাড়কেটে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে কয়েকবার পুকুরে পড়ে গিয়েছিল ফাহাদ। বড় হওয়ার সাথে সাথে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে রাখতে না পেরে ঘরের ভেতরে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়।

প্রায় ১৫ বছর যাবৎ সে লোহার খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে তার এলোমেলো ডাকে ছুটে আসেন মা নাছিমা বেগম। পরিবারের পক্ষ থেকে জন্ম থেকে চিকিৎসা করা হলেও বর্তমানে নাছিমা বেগম স্বামী সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। চার সন্তানের জননী নাছিমা বেগমের বড় মেয়ের ২০২০ সালে বিবাহ হলে হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখালের রামপুর এলাকায় স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে আসছে। হঠাৎ করেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় নাছিমা বেগমের সংসার। সাজানো গোছানো সংসার নিমেষেই তছনছ হয়ে যায়।

নাছিমা বেগমের স্বামী শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহজাহান ভূঁইয়া ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর নাছিমা বেগম তিন সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধ শুরু করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এবছরের ১৮ মার্চ নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হয়ে নাছিমার দুই সন্তান ১৬ বছর বয়সী ফাহিমা আক্তার ও ৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী আঃ রহমান মৃত্যু বরণ করে। সেই থেকেই একা হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম।

শাহরাস্তি পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের উপলতা ভূঁইয়া বাড়ির স্বামীর ভিটায় অসুস্থ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছেন নাছিমা বেগম। চোখে মুখে শুধুই অন্ধকার স্বামীর ঋণ ও সংসার চালাতে প্রতিদিনই বোঝা বাড়ছে তার।

হতাশার চাদরে ঢাকা নাছিমা বেগম জানান ১০ লক্ষ টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। ঘরে প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারছেন না তিনি। দিনদিনই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বসতঘরটি। আশপাশের দুএকজন ও বাবার বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যেই সহযোগিতা নিতে হয় তার। প্রতিবন্ধী ফাহাদ দিনভর লোহার খাঁচায় বন্দি থেকে রাতে মায়ের আঁচলের নিচে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেও নাছিমা বেগমের চোখে মুখে শুধুই অন্ধকার, কতটা রাত তার নির্ঘুমে কাটছে সেই হিসেব জানা নেই তার।

তার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া স্বামী ও আদরের দুই সন্তানের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন নাছিমা বেগম। সমাজের সচেতন মহল ও সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আলোর মুখ দেখতে পারে নাছিমা ও ফাহাদের জীবন।

Facebook Comments Box
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহরাস্তিতে কালীবাড়ি বাজার ব্যবসায়ী তারেকুল ইসলাম পাটোয়ারীর পিতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন

শাহরাস্তিতে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধে বিধবা মাতার সংগ্রাম

Update Time : ০২:৪৯:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মে ২০২৩

৫ বছর খাঁচায় বন্দি প্রতিবন্ধী ফাহাদ, স্বামী সন্তান হারিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন মা নাছিমা বেগম

২৩ বছর বয়সী জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী আঃ আজিজ ফাহাদ পিতা মাতার আদরের বড় সন্তান। হাঁটা চলা সহ কথাও বলতে পারেনা সে। ছোটথেকে বড় হওয়ার পর হাড়কেটে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে কয়েকবার পুকুরে পড়ে গিয়েছিল ফাহাদ। বড় হওয়ার সাথে সাথে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে রাখতে না পেরে ঘরের ভেতরে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়।

প্রায় ১৫ বছর যাবৎ সে লোহার খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে তার এলোমেলো ডাকে ছুটে আসেন মা নাছিমা বেগম। পরিবারের পক্ষ থেকে জন্ম থেকে চিকিৎসা করা হলেও বর্তমানে নাছিমা বেগম স্বামী সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। চার সন্তানের জননী নাছিমা বেগমের বড় মেয়ের ২০২০ সালে বিবাহ হলে হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখালের রামপুর এলাকায় স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে আসছে। হঠাৎ করেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় নাছিমা বেগমের সংসার। সাজানো গোছানো সংসার নিমেষেই তছনছ হয়ে যায়।

নাছিমা বেগমের স্বামী শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহজাহান ভূঁইয়া ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর নাছিমা বেগম তিন সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধ শুরু করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এবছরের ১৮ মার্চ নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হয়ে নাছিমার দুই সন্তান ১৬ বছর বয়সী ফাহিমা আক্তার ও ৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী আঃ রহমান মৃত্যু বরণ করে। সেই থেকেই একা হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম।

শাহরাস্তি পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের উপলতা ভূঁইয়া বাড়ির স্বামীর ভিটায় অসুস্থ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছেন নাছিমা বেগম। চোখে মুখে শুধুই অন্ধকার স্বামীর ঋণ ও সংসার চালাতে প্রতিদিনই বোঝা বাড়ছে তার।

হতাশার চাদরে ঢাকা নাছিমা বেগম জানান ১০ লক্ষ টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। ঘরে প্রতিবন্ধী সন্তান ও স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারছেন না তিনি। দিনদিনই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বসতঘরটি। আশপাশের দুএকজন ও বাবার বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যেই সহযোগিতা নিতে হয় তার। প্রতিবন্ধী ফাহাদ দিনভর লোহার খাঁচায় বন্দি থেকে রাতে মায়ের আঁচলের নিচে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেও নাছিমা বেগমের চোখে মুখে শুধুই অন্ধকার, কতটা রাত তার নির্ঘুমে কাটছে সেই হিসেব জানা নেই তার।

তার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া স্বামী ও আদরের দুই সন্তানের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন নাছিমা বেগম। সমাজের সচেতন মহল ও সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আলোর মুখ দেখতে পারে নাছিমা ও ফাহাদের জীবন।

Facebook Comments Box