মফস্বলে সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে কাজ করা একজন ব্যক্তির মুজুরি কত? তিনি কি আদৌ শ্রমিকের কাতারে পড়েন?
গ্রামবাংলায় সংবাদের পিছনে ছুটে বেড়ানো একজন গণমাধ্যম কর্মীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই বা কতটুকু?
এ পেশায় ছুটে বেড়ানো একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে যে মুজুরিটুকু পাচ্ছেন তা একজন নির্মাণ শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, ধানকাটা শ্রমিক কিংবা পরিবহন শ্রমিকের উপার্জনের সাথে মূল্যায়ন করলে কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকে তা কখনো কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
সাংবাদিক সম্পর্কে আত্মীয় স্বজনরা ভাবেন, অনেক বড় সাংবাদিক, বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে, অনেক টাকা বেতন পায়!
এলাকার মানুষ ভাবেন সাংবাদিক থানায় দালালি করে, ওরে দেখলেই মানুষ ভয়ে টাকা দেয়। বিভিন্ন জায়গার টাকার ভাগ পায়, দুর্নীতিবাজরা টাকা দিয়ে ওদের কিনে নেয়। ব্যাপক ইনকাম!
রাজনৈতিক নেতারা ভাবেন, সাংবাদিকরা ২শ ৫শ টাকা দিলেই নিউজ কাভারেজ দেয়। এনজিও কর্মীরা ভাবেন, সাংবাদিকদের মাঝে মাঝে ডেকে এনে দুপুরে এক প্যাকেট বিরিয়ানি আর ৩শ টাকার একটা হলুদ খাম ধরিয়ে দিলেই নিউজ কভারেজ পাওয়া যাবে।
প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা ভাবেন, আমরা যা বলবো সাংবাদিক তাই লিখবে। এটাই ওদের কাজ।
আর আমজনতা ভাবেন, সাংবাদিকরা সরকারের দালালি করে, টাকা নিয়ে শুধু মিথ্যা কথা লেখে।
আপনি যদি মফস্বলে কাজ করা একজন সাংবাদিককে জিগ্যেস করেন তার মাসিক আয় কত? লজ্জায় কারো কাছে প্রকাশ করবে না। আর্থিক দৈন্যদশায় ভোগা অনেক কে সংসারের ঘানি টানতে হাবুডুবু খেয়ে ভিজিএফ’র চাল সংগ্রহ কিংবা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (১০/১৫ টাকার) চাল কিনতে দেখেছি। এখানে শুধু নেশার ঘোরে লোকজন কাজ করে যায়। নিজের বা পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভুলে মানুষের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে। দিন শেষে প্রভাবশালীর রক্তচক্ষু ও তথ্যপ্রযুক্তি মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে আমজনতার কটু কথা শুনতে হয়।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশকে শত্রু মুক্ত করতে যাদের কাছে আমরা ঋণী তাদের মধ্যে শহীদ সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। সকল পেশাতেই নীতিমালা হয়েছে। (উদাহরণ হিসেবে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও এবং আইনজীবীদের বার কাউন্সিল উল্লেখ করছি) কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য সেরকম কোন নীতিমালা তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত সাংবাদিকদের তালিকা পর্যন্ত প্রনয়ণ হয় নি।
শ্রমিকদের নূন্যতম মুজুরি, কর্মঘণ্টা ও ওভার টাইমের নিয়ম থাকলেও মফস্বল সাংবাদিকের জন্য কোন নিয়ম নেই। শ্রম আইন সাংবাদিকদের জন্য নয়।
আমাদের রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ বলা হয় সেই খুশিতে গদগদ হয়ে সবাই বগল বাজাচ্ছে অথচ আমাদের শ্রম নূন্যতম শ্রমিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয় নি। মফস্বল সাংবাদিকরা কোন কর্মকর্তা বা শ্রমিক নয়, তাদের কোন মুজুরি নীতি (ওয়েজ বোর্ড) নেই, কোন দিবস নেই। কারণ তারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো এক প্রজাতি।