শাহরাস্তির রায়শ্রী উত্তর রায়শ্রী গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের উদ্যোগে পবিত্র লাইলাতুল কদর এর ফজিলত শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত হয়ে কুরআন হাদীস থেকে তথ্য ভিত্তিক রমজান ও কদরের ফজিলত পূর্ণ আলোচনা রাখেন উক্ত মসজিদের সম্মানিত খতিব বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ এর লাইব্রেরীয়ান শিক্ষক মাওলানা মিজানুর রহমান সাহেব, অত্র মসজিদের মুসল্লি সাংবাদিক শাহ আলম ভূঁইয়া।
আলোচনায় বলেন আরবি ‘ কদর’-এর অনেক অর্থ, যেমন- পরিমাপ, পরিমাণ, নির্ধারণ, ভাগ্য নিরূপণ, সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ, মহিমান্বিত ও ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।
পবিত্র কোরআন নাজিল হয় লাইলাতুল কদরে। এ কারণেই রাতটির এত বড় মর্যাদা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি একে অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে।’ (সুরা- দুখান)
পূণ্যময় এ রাতের সম্মানে পবিত্র কোরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা ‘সুরাতুল কদর’নাজিল হয়েছে। এ সুরায় বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (সুরা- কদর)
হাজার মাসের চেয়ে উত্তম অর্থ শুধু যে একহাজার মাসের চেয়ে উত্তম-বিষয়টি এমন নয়, বরং অনেক বেশি বোঝাতেও হাজার শব্দটা ব্যবহার করা হয়। তারপরও আমরা যদি এখানে শুধু এক হাজার মাসই ধরি এর সময় দাঁড়ায় ৮৩ বছর ৪ মাস। তার মানে ৮৩ বছর ৪ মাস পর্যন্ত ইবাদত করার যে ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া যায় তা এ এক রাতের ইবাদতের দ্বারাই মহান আল্লাহ প্রদান করে থাকেন।
‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে (ঈমানসহ) এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় এ রাতে জেগে ইবাদত বন্দেগি করবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের সব পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’ রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, ‘এ মাসে (রমজানে) এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসায়ি)
কিন্তু শবে কদর কবে? রমজানের কোন রাতটিকে শবে কদর বলা হয়? এর সরাসরি কোনো উত্তর কোরআন-হাদিসে আসেনি। তাই নবীজি রমজানের শেষ দশকে শবে কদর তালাশ করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো।’(বুখারি: ২০১৭)
মহিমান্বিত এ রজনীর সব নেয়ামত হাসিলের জন্য প্রথমেই শিরকমুক্ত ঈমান, পরিশুদ্ধ নিয়ত ও বেদআতমুক্ত আমলের মাধ্যমে রাতযাপন করতে হবে। কদর লাভের আশায় শেষ ১০ দিনে ইতেকাফ করা, বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, দোয়া-দরুদ, দান-সদকা ও তওবা-ইসতেগফার করা উচিত।
এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। সুতরাং লাইলাতুল কদর তালাশ করে সঠিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত যাপনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
কেউ শবে কদর পেলে, তার জন্য একটি বিশেষ দোয়ার উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর— তাহলে তখন কোন দোয়া পড়বো? তখন তিনি বললেন, তুমি বলো—আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)
বায়তুন নূর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ নুরুল হক ও মুসল্লি মনির হোসেন দোয়া পরিচালনা করেন। সবশেষে খতিব মাওলানা মিজানুর রহমান মুনাজাত পরিচালনা করেন।
Facebook Comments Box