গত মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল/২০২৩) চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানাধীন বানিয়া চৌঁ বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি চা দোকানের সামনে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এক ছেলেকে ঘুরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় নয়ন নামের এক যুবক তাকে মেহের উত্তর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের হেফাজতে নেন। একদিন খোঁজাখুঁজি করেও তার পরিবারের সন্ধান না পেয়ে তারা ছেলেটিকে বুধবার রাত ৯টায় সাংবাদিকদের কাছে নিয়ে আসেন। সেখানে সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ও কামরুজ্জামান সেন্টু শিশুটির সাথে কথা বলেন। তখন শিশুটি জানায়, তার নাম ইয়াসিন, বাবার নাম মোস্তাফিজ, মায়ের নাম বিলকিস বেগম, ভোলা বা চরফ্যাশন এলাকার বাসস্ট্যান্ডের পাশে তার বাড়ি। যদিও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার দেয়া এসব পুরাপুরি সঠিক ধরতে না পেরে সাংবাদিকরা চরফ্যাশন ও ভোলা এই দুটি শব্দকে টার্গেট করেন।
ইন্টারনেটের কল্যাণে চরফ্যাশন পৌর মেয়র ও একজন কাউন্সিলরের ছবি ছেলেকে দেখানো হয়। জবাবে ছেলেটি তাদেরকে এলাকার নেতা ও চেয়ারম্যান বলে জানান। এরপর ভোলা সদর হাসপাতাল ও চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছবি দেখানো হয়। সে এই দুটো হাসপাতাল, একটি তার বাড়ির কাছে অপরটি শহরে বলে জানায়।
এরপর চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান মহোদয়, ভোলার সাংবাদিক মনির হোসেন জিন্নাহ রাজিব ও গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং সাংবাদিকরা ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। দেড় ঘন্টার মধ্যে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান মুঠোফোনে জানান, শিশুটির পরিবারের খোঁজ বের করে তাদের শাহরাস্তি আসার প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইয়াসিনের বাবা ও ফুফু কয়েকজন আত্মীয়সহ শিশুটিকে নিতে আসেন। তাঁরা জানান, তাদের বাড়ি ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তারা চরফ্যাশন উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসবাস করেন।
ইয়াসিনের বাবার নাম কামাল হোসেন, মা বিবি হাসিনা। ছোটবেলায় তার মায়ের মৃত্যু হলে সে জেঠা মোস্তাফিজ ও জেঠি বিলকিস বেগমকে মা বাবা হিসেবে জানে।
মেহের উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের মাধ্যমে শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেন সাংবাদিকদ্বয়। বিকেল ৫ টার লঞ্চে তারা চাঁদপুর থেকে ভোলার উদ্দেশ্যে লঞ্চে উঠেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো শিশুটির ছবি হাতে পেয়েই তিনি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে তাদের শনাক্ত করে শাহরাস্তি আসার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা করেছেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সারাদিন দাফতরিক ব্যস্ততা শেষে ইফতারের পর নিজের বিশ্রামের সময়ে ছেলেটিকে পরিবারের কাছে পৌঁছানোকে অনেক বড় দায়িত্ব মনে করেছেন।