ফরিদগঞ্জে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্যে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামকে ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানায়, ২৮ মার্চ অসহায় নারী পুরুষ চাল নিতে ভিজিডি কার্ড নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যায়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. আমির হোসেন কার্ডধারীদের চাল দিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এতে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিতে থাকে। ফোন পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন হেলাল উদ্দিন রাসেল। তিনিও কেন চাল দেওয়া হবে না সচিবের কাছে জানতে চান। এ সময় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের রুমে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে একে অপরকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় হেলাল উদ্দিন রাসেল এবং সাইফুল হাতে আঘাত পান। খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাইফুল মেম্বারকে ফরিদগঞ্জ নিয়ে আসেন। হেলাল উদ্দিন রাসেল ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডি কার্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ ৯ জন ইউপি সদস্য। গত ২৭ মার্চ তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি দরখাস্ত করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে আহত হেলাল উদ্দিন রাসেল বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমার এক গরীব আত্মীয়কে একটা চালের কার্ড দিয়েছিল, উক্ত কার্ডের চালের জন্যে তিনি পরিষদে যান। কিন্তু তাকে চাল দিচ্ছে না দেখে তিনি আমাকে কল দেন। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। এবং সচিবের কাছে চালের কথা বললে তিনি বলেন, চাল দেওয়া যাবে না। উপজেলা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আপনি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেন। ইউপি সচিবের সাথে কথা বলার একপর্যায়ে ইউপি সদস্য সাইফুল আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ভিজিডির ১৩০টি কার্ড আমাদের পরিষদে আসে। এ বিষয়ে আমরা (ইউপি সদস্য) চেয়ারম্যানের সাথে কথা বললে তিনি পুরুষ মেম্বাররদের ৪টি এবং মহিলা মেম্বারদের ৩টি কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবার কাগজপত্র নেন। কিন্তু পরবতীর্তে তিনি পুরুষদের ২টি এবং মহিলাদের ১টি করে কার্ড দেন। এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ২৭ মার্চ আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর একটি লিখিত আবেদন করি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউএনও স্যার চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন। আমি সকাল বেলা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে হেলাল উদ্দিন রাসেলসহ চেয়ারম্যানের একদল সন্ত্রাসী আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং চুরি দিয়ে আঘাত করে। আমি এই ঘটনায় দুষিদের শাস্তি কামনা করছি।
ঘটনাস্থলে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আমির হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। কোনো কিছু জানার থাকলে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।’ এ কথা বলে তিনি পুলিশের সাথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এরমক একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে চেয়ারম্যানকে পরিষদে যেতে দেখা যায়নি। ঘটনার বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা চেয়ারম্যানকে না পেয়ে একাধিকবার তার মুঠো ফোনে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি বিধায় উনার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফরিদগঞ্জ থানার এসআই শামছুজ্জামান জানান, ইউনিয়ন পরিষদে মারামারির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে ইউপি সচিব ও সাইফুল মেম্বারকে নিয়ে থানায় নিয়ে এসেছি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ও ট্যাগ অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই ইউনিয়নে বিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ করার কথা ছিল, কিন্তু ইউএনও স্যার আমাকে আপাতত চাল বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন।’
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুর ৩টার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠো ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।